Wednesday, June 8, 2011

লাবণ্যের ওপর ছুরি চালানোর ঘটনায় অনুতপ্ত নাদিয়া


লাবণ্যের গলায় ছুরি চালানোর পর আটক হয়ে সোমবার রাতে ছিল কলাবাগান থানা হাজতেই। গতকাল সকালে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে। কাঠগড়ায় ওঠার আগে ফোনে কথা বলে তার ভাই এনামুল হক রানার সঙ্গে। তখন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে নাদিয়া। বলতে থাকে, প্রেমের আগুনে জ্বলছি আমি। এ আগুনে পুড়ে ছাই হতে চাই। তোরা আমার জন্য আফসোস করিস না, দুঃখ করিস না। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতের কাছে জবানবন্দি দেয় সে। আদালতে জানায়, মতিন, তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম আমি। লাবণ্য বেঁচে আছে- এখনও জানে না নাদিয়া। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাই সে প্রথমেই বলে, মাননীয় আদালত, আমি খুনি। আমাকে ফাঁসি দিন। ওদিকে গত রাতে পুলিশের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে বিলকিস খাতুন নাদিয়া। বলেছে, আমি মতিনকে সব দিয়েছি। যা চেয়েছে, তা-ই দিয়েছি। রাতের পর রাত তার সঙ্গে কাটিয়েছি। তা সত্ত্বেও আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য ওর সন্তানের গলায় ছুরি চালিয়েছি। মতিনের প্রেম ও প্রতারণা আমাকে দিশাহারা করে তোলে। এজন্য শুধু লাবণ্য নয়। মতিনের এক বছরের শিশুপুত্র ও স্ত্রী রীনাকেও খুন করার ভূত চেপেছিল মাথায়। কলাবাগান থানার ওসি মো. এনামুল হক বলেন, মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও নাদিয়া এসব স্বীকার করেছে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নাদিয়ার ভাই এনামুল হক রানা বলেন, থানা থেকে কোর্টে চালান করার সময় নাদিয়া আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে লাবণ্যের গলা কাটার কথা বলেছে। এ সময় সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বলেছে, প্রেম ও বিয়ের অভিনয় করে মতিন তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, মতিন বিয়ে করতে অস্বীকার করার পর থেকেই নাদিয়া প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কৌশল খুঁজতে থাকে। এজন্য শনিবার থেকেই মতিনের বাসায় গিয়ে তার সন্তানকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাদিয়া জানায়, লাবণ্যকে খুন করার পর অরণ্য ও মতিনের স্ত্রী রীনা খানমকেও খুন করার টার্গেট ছিল। এ ঘটনায় লাবণ্যের মা রীনা খানম কলাবাগান থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামি হিসাবে অজ্ঞাত ৩০ বছরের এক মহিলার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুই সন্তান লাবণ্য (৩) ও অরণ্য (১)-কে বাসার কাজের মেয়ে লায়লার (১৬) কাছে রেখে আল-আমিন সড়কে মোবাইল ফোন মেরামতের জন্য যান। এর কিছুক্ষণ পর তার দেবর আজাদ গ্রামের বাড়ি থেকে বাসায় আসেন। এরপর ওই মহিলা বাসায় ঢুকে মতিনের অফিসের লোক হিসেবে পরিচয় দেয়। লাবণ্যকে কোলে নিয়ে কয়েকবার চুমু খায়। এক পর্যায়ে কাজের মেয়েকে পানি এনে দেয়ার কথা বলে লাবণ্যকে তার বিছনার ওপর উপুড় করে শুইয়ে দেয়। এরপর লাবণ্যর ওপর চেপে বসে তার গলায় ছুরি চালায়। সে বলেছে, ছুরির আঘাতে লাবণ্য চিৎকার করে বলে ওঠে, লায়লা আপু আমাকে বাঁচাও। আন্টি আমাকে মেরে ফেলছে। তার চিৎকার শুনে লায়লা দৌড়ে সেখানে গিয়ে লাবণ্যের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে আজাদ বাথরুম থেকে বের হয়ে ছুরিসহ ওই মহিলাকে আটক করে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর তিন বছরের সন্তান লাবণ্যকে নিয়ে তার পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লাবণ্য এখন ঝুঁকিমুক্ত। অল্পের জন্য সে বেঁচে গেছে। কানের ওপর দিয়ে ছুরি চালানোর কারণে গলার রগ কাটা পড়েনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিড়ম্বনা মনে করে লাবণ্যের পরিবার কলাবাগানের বাসা ছেড়ে অন্যত্র উঠেছে। ওদিকে ঘটনার পর থেকেই প্রেমিক আবদুল মতিন আত্মগোপনে। গতকাল পর্যন্ত পুলিশ তার কোন হদিস পায়নি। ডিফাম হাসপাতালের এমডি মো. মিন্টু রহমান বলেন, তার হাসপাতালে নার্সের চাকরিকালে নাদিয়ার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা দেখতে পাননি। ২০০৯ সালের ১৪ই জুন হাসপাতালের নার্স হিসেবে সে যোগ দেয়। থাকতো হাসপাতালের হোস্টেলে। ডিফাম হাসপাতালের নার্স সুপারভাইজার মুন্নু মোল্লা বলেন, নাদিয়াকে ভাল মেয়ে হিসেবেই জানতাম। তাকে কখনও নামাজ মিস করতে দেখিনি। চাকরিকালে জায়নামাজ সঙ্গে রাখতো। নামাজের সময় হলেই খালি থাকা কেবিনে ঢুকে নামাজ আদায় করতো। নাদিয়ার বাড়ি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার কিসমত শেরপুর গ্রামে। ২০০৮ সালে আজহারুল ইসলামের সঙ্গে নাদিয়ার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ওই বিয়ে মাত্র ৫ দিন টিকেছিল বলে নাদিয়ার বড় ভাই রানা জানান। রানা বলেন, নাদিয়ার আগের স্বামী মাদকাসক্ত ছিল। এ কারণে তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে নাদিয়া সপ্তম।

No comments:

Post a Comment