Monday, September 9, 2013

ভুয়া বউ

ওদের পেশা বউ সেজে প্রতারণা। কখনও গ্রাম্য বধূ, কখনও ধার্মিক স্ত্রী, আবার কখনও প্রবাসী কনের ছদ্মবেশে বাসরঘর করে। সুযোগ বুঝে স্বামীর সবকিছু লুটে লাপাত্তা হয় ভোর হওয়ার আগেই। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সক্রিয় এমন অর্ধ শতাধিক ভুয়া পাত্রীর সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা প্রতিদিনই কারও না কারও বউ সেজে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। পুলিশের করা ভুয়া পাত্রীর তালিকায় আছে- ইরানী, মিশু, সালমা, শায়লা, মিতু, ডালিয়া, নদী, সাথী, তৃষ্ণা, ডেইজী ও তিশা। গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ চার ভুয়া পাত্রী আসমাউল হুসনা মিশু (২৪), সাদিয়া মিতু (২৭), সায়লা শারমীন (৩৬) ও সালমা (২৮)-কে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া তাদের চার পুরুষসঙ্গী এরশাদ (৩৮), আলমগীর হোসেন ওরফে বাদশা (৩৪), ইকবাল হোসেন (২৮) ও  জাহাঙ্গীর (৩৩) গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে  আরও ১০-১২ জন পাত্রী ঘটনাস্থল থেকে  পালিয়ে গেছে। গোয়েন্দারা জানান, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অপরূপ সাজে বসে থাকে তারা। প্রবাসী, ধনীর দুলালী, অভিজাত এলাকার গাড়ি-বাড়ির মালিক ও  ডিভোর্সি  থেকে শুরু করে ধার্মিক বোরকাওয়ালি বনে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। বিদেশ যেতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে দেখানো হয় ভিসা লাগানো পাসপোর্ট ছাড়াও অপরূপা পাত্রীর ছবি। চাইলে সশরীরে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতারণার শুরুতেই ম্যারেজ মিডিয়া নাম দিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে বসে তারা। পরে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে। বিত্তশালী ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে তাদের চাহিদা মোতাবেক পাত্রী হাজির করে। পরে পাত্রপক্ষকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রতারিত একাধিক পাত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় বাড্ডার আফতাব নগরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চার নারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ভুয়া পাত্রী মিশু, সায়লা, সালমা ও মিতু জানায়, ইরানী, মুন্নি ও  তিশার সিন্ডিকেটে অর্ধ শতাধিক নারী রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ায় স্ত্রী হিসেবে ভাড়া খাটে। বরের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি অংশ তারা পেয়ে থাকে। গোয়েন্দারা জানান, ‘প্রবাসী পাত্রীর জন্য পাত্র চাই’, ‘বিদেশে যেতে আগ্রহী এমন সৎ পাত্র চাই’, ‘বিদেশে বসবাসকারী পাত্রীর জন্য সুপাত্র চাই’ উল্লেখ করে নজরকাড়া বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিদেশ গমনকারীদের দৃষ্টি কাড়ে তারা। আগ্রহী পাত্র ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে এই নারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় প্রবাসী পাত্রী হিসেবে। পাত্রপক্ষের বিশ্বাস অর্জন করতে প্রতারকরা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিক হিসেবে এই নারীদের ছবি লাগানো জাল পাসপোর্টও দেখিয়ে থাকে। অভিযানকালে আফতাবনগরের ওই বাসা থেকে প্রচুর নিকাহনামা, নোটারি পাবলিকের স্ট্যাম্প ও  পাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের ছবি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। অভিযান পরিচালনাকারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের  এডিসি, (পশ্চিম) আশিকুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ম্যারেজ মিডিয়া নামে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা প্রবাসী ভুয়া সুন্দরী মহিলাদের পাত্রী সাজিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের মূল হোতা এরশাদ গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ৫-৬ বছর ধরে বেশ কয়েকজন সুন্দরী মহিলাকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যাল্ড ও আমেরিকার নাগরিক বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পাত্র চাই মর্মে চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ লোকজন মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ‘কথিত কাউন্সিলর’দের মাধ্যমে তার ম্যারেজ মিডিয়ার অফিসে নিয়ে আসে। ওই সুন্দরী মহিলাদের জাল ভিসা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করানোর মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ভুয়া নিকাহনামার মাধ্যমে বিবাহ করিয়ে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করে। পরবর্তী সময়ে অন্যত্র অফিস নিয়ে আবারও ওই প্রতারণামূলক ব্যবসা শুরু করে। ধৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তাদের সঙ্গীয় প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্য ইরানী, মুন্নী, তিশা, সাগর ও  মিজান অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

Tuesday, May 7, 2013

এরা কারা!

হেফাজতের অবরোধে সংঘর্ষ চলাকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সশস্ত্র ছাত্রলীগ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।

Wednesday, March 27, 2013

এবার সিএনজি স্টেশন দখল করে নিলো ছাত্রলীগ নেতারা

নূরুজ্জামান: সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নেয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে দাম চেয়েছিলেন কর্মচারীরা। অপরাধ এটুকুই! এজন্য সিএনজি স্টেশনই দখল করে নেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় কার্যক্রম। মারধর করা হয় কর্মচারীদের। ইট, সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল তুলে দেয়া হয় প্রবেশপথে। ঘটনার শুরু রোববার রাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকার ইসা গার্ডেন প্রাইভেট লি. সিএনজি ফিলিং স্টেশনে। এই ফিলিং স্টেশনের মালিকও ছাত্রলীগের এক সময়কার কেন্দ্রীয় সভাপতি। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বনানী থানা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতা। মহাখালী শহীদ তাজউদ্দিন সরণির ৫৩/১ নম্বর হোল্ডিং-এ ওই সিএনজি ফিলিং স্টেশন গতকাল দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাম্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাজ বন্ধ করে জড়োসড়ো হয়ে তারা বসে আছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, ২৪শে মার্চ রাত ১১টার দিকে পরিচয় না দিয়েই ৩-৪ জন যুবক সিরিয়াল অমান্য করে গ্যাস নেয়ার জন্য ফিলিং স্টেশনে ঢুকে পড়ে। এসময় ফিলিং অপারেটর (ডিসপেনসারম্যান) মো. রুবেল তাদের ক্রমানুসারে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে বলেন। এতে যুবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে গাড়ি থেকে নেমেই রুবেলকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারতে থাকে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফিলিং স্টেশনের ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর রহমানও পিটুনির শিকার হন। পরে জোর করেই ৩৯৪ টাকার গ্যাস নেয়া হয় তাদের প্রাইভেটকারে। এসময় কর্মচারীরা ওই টাকা পরিশোধের জন্য রশিদ দিলে ফের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই যুবকরা। এদের মধ্যে এক যুবক নিজেকে বনানী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বলে ওঠে, ‘তুই আমার কাছে টাকা চাইলি, কাজটা ভাল করলি না। এর খেসারত পাবি।’ এরপর মধ্যরাতে ছাত্রলীগের বনানী থানার সভাপতি আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে আরও ১৫ থেকে ১৬ জন নেতাকর্মী ওই ফিলিং স্টেশনে হানা দেয়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খুঁজতে থাকে। ম্যানেজারকে পেয়ে গালিগালাজ করে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করতে বলে। একই সঙ্গে স্টেশনের বহির্গমন পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। পরের দিন সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রলীগের ওই নেতা ইট, বালু ও সিমেন্ট সহ নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে এসে ওই জায়গায় স্থায়ীভাবে দেয়াল তুলে দেয়। যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘এখানে ছাত্রলীগের কার্যালয় হবে, আশপাশে আর কিছু থাকতে পারবে না।’ ঘটনাস্থলের পাশেই দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের টিএসআই আজিজুল হাকিম বলেন, সিএনজি স্টেশনের ভেতরে ছাত্রলীগের ছেলেরা ওয়াল তুলে দিয়েছে। তবে কি কারণে দিয়েছে তা জানি না। দেয়ালের পাশেই ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ রয়েছে। ওই বুথের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকজন ইটের দেয়াল তুলে দিয়ে চলে গেল। গ্যাস নিয়ে গাড়ি বের হওয়ার পথে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা ও তিন ফুট উঁচু এ দেয়ালের কারণে ফিলিং স্টেশন ও ব্যাংকের বুথের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইসা গার্ডেন প্রাইভেট লি. সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক মনিরুল হক চৌধুরী। তিনিও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। তবে তিনি এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। এখন বিএনপি’র রাজনীতি করেন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছ থেকে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে তিনি এই ফিলিং স্টেশন চালু করেছেন ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। যারা দেয়াল তুলে দিয়েছে তারাও ছাত্রলীগের লোকজন। দেয়াল নির্মাণের সময় আমাদের জানালে আমরা কাজ বন্ধ করে দিতে পারতাম। এখন কর্তৃপক্ষকেই দেয়াল ভেঙে ফেলতে বলেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ নেয়া হলে আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বনানী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ওই ফিলিং স্টেশনের লিজ অনুযায়ী ১২০ ফুট জায়গা নেয়ার কথা সেখানে তারা দখল করেছে ১৪০ ফুট। এলাকাবাসীর সহায়তায় আমরা এলাকার রাস্তা উদ্ধার করে দেয়ার কথা দিয়েছি। স্টেশন বন্ধ বা দখল করার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
মানবজমিন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৩

Tuesday, February 19, 2013

ব্লগার রাজীব হত্যাকান্ড- দুই গার্লফ্রেন্ডকে ঘিরে রহস্য

স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে 'সহায়তাকারী' তরুণী তানজিলা ও রাফিকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে। তারা শোভনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে পুলিশ দাবি করছে। গত তিন দিন ধরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, তারা খুনিদের শনাক্ত করতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে। তারা কোন ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এ দুই তরুণীর মধ্যে কোনো একজন খুনিদের সহায়তাকারী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করতে চায়নি পুলিশ। এদিকে ঘটনার ৪ দিন পার হলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শোভনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। গত শুক্রবার রাতে পল্লবী থানাধীন পলাশনগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে নিহত হন স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার শোভন। এ ঘটনায় ওইদিন ভোরে তার বাবা নাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। এরপর রোববার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনার চারদিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই গালি এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে আটকের পর ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
 
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র এসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, শোভনের বান্ধবী তানজিলা ও রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা মূলত শোভনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কার্যকলাপের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ইতোমধ্যে পুলিশ কিছু দূর পর্যন্ত তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই খুনিরা গ্রেপ্তার হবে। তদন্ত সূত্র জানায়, রাফি ময়মনসিংহ ত্রিশালের কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। ময়মনসিংহ থাকা অবস্থায় ফেসবুকে শোভনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিয়মিত ঢাকায় এসে শোভনের সঙ্গে দেখা করতেন রাফি। শোভনও ময়মনসিংহ গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতেন। অপর বান্ধবী তানজিলার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়। বাবা মারা যাওয়ার পর এইচএসসি পাস করে আর লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ৪ বছর আগে ঢাকায় এসে মিরপুর ১৩ নাম্বার এলাকার একটি রুম নিয়ে তিনি বসবাস শুরু করেন। তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডে একজন নারীর সহায়তা রয়েছে। খুনি যেই হোকে তারা তানজিলা অথবা রাফির সহায়তা নিয়ে খুন করেছে। হয় খুনিরা রাফির অভিমানকে হাতিয়ার হিসেবে শোভনের বাসার ঠিকানা ও বাসায় ফেরার সময়সূচি জেনেছে। না হয় তানজিলার অভাবটাকে হাতিয়ার হিসেবে খুনিরা ব্যবহার করেছে। তবে এই মুহূর্তে খুনিদের সম্পর্কে তথ্য বের করার জন্যই কৌশল হিসেবে তানজিলা ও রাফির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা গেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। পুলিশের এ কৌশল অনেকটা 'হোস্টেস নেগোসিয়েশনের' মতো। মূলত পুলিশ সহায়তাকারী নারীকে আগে শনাক্ত করতে চাচ্ছে। খুনিদের সঙ্গে তাদের মধ্যে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এই মামলায় যেকোনো সময় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন বিকালে তানজিলাই শোভনকে বাসা থেকে ডেকে নেন এবং নানা কৌশলে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত করে বাসায় ফিরতে বাধ্য করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের ব্যাপারে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। তার দেয়া তথ্যমতে কয়েকজনের কললিস্ট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুনিদের সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, খুনিরা অনেক ধুরন্ধর। তারা পুলিশের প্রযুক্তি কৌশল সম্পর্কে অবহিত। এই কারণে খুনিদের অবস্থান বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। খুনিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারের ঠিকানাও ভুয়া।

Thursday, November 1, 2012

হাই ক্লাস কলগার্ল

সিরাজুল ইসলাম: ২২ বছর বয়সী মডেল কন্যা প্রিয়াংকা জামান একজন হাই ক্লাস কলগার্ল। লিবীয় নাগরিক সামির আহমেদ ওমরের সঙ্গে 
 ৭-৮ মাস আগে এক ডিজে পার্টিতে তার পরিচয়। ওই পার্টি হয়েছিল রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে। তার সঙ্গে গত কয়েক মাস সে নিয়মিত রাত কাটিয়েছে রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে। অন্য বন্ধুদের সঙ্গেও এভাবে রাত কাটানোর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ৬ দিনের রিমান্ডে মহানগর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন পরিচয়ই প্রকাশ পেয়েছে প্রিয়াংকার। এ সব তথ্য জানিয়েছে সে নিজেই। সে জানিয়েছে, ছোটবেলাতেই তার পিতা আসাদুজ্জামান মারা যান। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের রঙ্গুর বাজার আলভি গ্রামে। শিশুকাল থেকেই বড় হয়েছে ঢাকায়। বর্তমান ঠিকানা ৩১/১ সার্কুলার রোডের সিদ্ধেশ্বরীতে। প্রিয়াংকা জানায়, স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৩ বছর বয়সে তার প্রথম বিয়ে হয়। তার একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান  রয়েছে। তাদের বয়স ৭ ও ৫ বছর। তারা নানীর কাছে বেড়ে উঠছে। বিলাসী জীবনের আকাঙক্ষার কারণে ৩-৪ বছরের ওই সংসার ভেঙে যায়। পরে সে আবার স্কুলে ভর্তি হয়। ২০০৪ সালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর আগে ৮ বছর বয়সে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর মাধ্যমে নাচ শিখতে শুরু করে। ২০০৭ সালে বিটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘ছায়াছন্দ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই উপস্থাপনা জগতে তার হাতেখড়ি। ‘আজিজ মার্কেট’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পরিচিতি। মডেল হিসেবে কাজ করেছেন আরএফএল, মাধুরী জুয়েলার্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে। ফটোশপে অংশ নিয়েছেন কৃষ্ণচূড়া ড্রেস হাউজসহ কয়েকটি হাউজে। রূপসী বাংলা, রেডিসনসহ পাঁচতারকা হোটেল ছাড়া অন্য কোন স্থানে এখন সে ডিজে পার্টিতে অংশ নেয় না।
দেশীয় খাবারে অনীহা: প্রিয়াংকাসহ লিবীয় নাগরিকরা রিমান্ডে আসার পর দেশীয় খাবার খেতে অপারগতা প্রকাশ করে। তারা চাইনিজসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড খেতে চায়। ডিবি কর্মকর্তারা ওইসব খাবার দিতে কোনভাবেই রাজি নয়। এক পর্যায়ে ঈদের দিন থেকে তারা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে তাদের স্যালাইন পুশের ভয় দেখানো হলে দেশীয় খাবার গ্রহণ করে।
অসুস্থ ওমরের বায়না: প্রিয়াংকার বয়ফ্রেন্ড ওমর গতকাল সকাল থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানায়, সে প্রচণ্ড পেটব্যথায় ভুগছে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হলে বায়না ধরে, প্রিয়াংকাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কিছুতেই ওমরের সঙ্গে হাসপাতালে প্রিয়াংকাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে ওমর কিছুতেই প্রিয়াংকাকে ছাড়া হাসপাতালে যাবে না। পরে দুপুর পর্যন্ত মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের একটি রুমে প্রিয়াংকাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওমরের সান্নিধ্যে। ওই রুমে ওমরের হাত, পা ও কপাল টিপে দেয় প্রিয়াংকা। ওই সময় পুলিশের ২ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সদস্য তাদের সামনে ছিল। অপর ২ লিবীয় নাগরিক আমারা মোহাম্মদ আমারা এবং মোবারক ফার্গ সেলিমকে বারান্দায় বসিয়ে রাখা হয়। আমারা ও মোবারক সেখানে বসে ধূমপান করে অলস সময় কাটিয়েছে। পরে বেলা ২টার দিকে প্রিয়াংকাকে ছাড়াই ওমরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মায়ের তদবির: মডেল কন্যা প্রিয়াংকাকে ডিবি’র জাল থেকে মুক্ত করতে নানাভাবে তদবির করছেন তার মা। কাজে লাগানো হচ্ছে অভিজাত পরিবারে থাকা প্রিয়াংকার বয়ফ্রেন্ডদের। গতকাল সকালে তার মা নিজে ডিবি কার্যালয়ে এসে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা ব্যক্ত করে বলেছেন, আমার কোন ছেলে নেই। আমার নিজেরও কোন আয়ের উৎস নেই। দুই মেয়ের উপার্জনে আমার সংসার চলে। আমি জানতাম না মেয়ে বিপথে চলে গেছে। জানতাম- প্রিয়াংকা যেসব টাকা-পয়সা উপার্জন করছে সবই বৈধভাবে করছে। অভিনয়, ফ্যাশন শো’ এবং ফটোশপে অংশ নেয়া ছাড়া সে কোন অবৈধ পথে টাকা উপার্জন করছে তা জানতাম না। আমার মেয়েকে যদি একবারের মতো ক্ষমা করেন তবে তাকে আর বিপথে যেতে দেবো না। তবে প্রিয়াংকার মায়ের এসব আকুতিতে মন গলেনি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তার।
গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য: ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, মডেল কন্যাসহ ৩ লিবীয় নাগরিকের ৬ দিনের রিমান্ড আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) শেষ হচ্ছে। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, ৬৮৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ১ লাখ ৮১ হাজার ৩০৪ ইউএস ডলার, ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৫০২ টাকা, ৮ লিবিয়ান দিনার, ২ কাতারীয় রিয়াল, ৭টি মোবাইল সেট, ১টি ল্যাপটপ, ২টি আইপ্যাড, ১টি ব্ল্যাকবেরি নোটপ্যাড, ২ বোতল সুইডিশ ভদকা, ২টি মাস্টার কার্ড এবং ৭টি আইডি কার্ডসহ ২৩শে অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর হোটেল লেক শোর থেকে প্রিয়াংকাসহ ৩ লিবীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারকৃত অর্থের বৈধতা এবং লিবীয় নাগরিকদের কোন পাসপোর্ট এখনও পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেনি। মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম মনে করেন, অঢেল অর্থ সম্পদ ও বিলাসী জীবন লাভের প্রত্যাশায় প্রিয়াংকা জড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক পাচারকারী ও প্রতারক দলের সদস্যদের সঙ্গে। লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে তারা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনেকে লিবিয়া গিয়ে বৈধতা লাভে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে আসছে। এ চক্রের সঙ্গে দেশীয় কিছু ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত আছে।
মানবজমিন, বৃহস্পতিবার, ০১ নভেম্বর ২০১২

ক্রীতদাসী নিশিকন্যা

লায়েকুজ্জামান: সবুজের নাকের ডগা পেরিয়ে লিপটনের হাত ধরে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে সোজা রিকশায় ওঠে লিপি। পিছু ডাকছে সবুজ, অনেকবার। শুধু একবার ঘাড় ঘুরিয়ে সোজা সাপটা বলে দেয় লিপি- তোমার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়েছে লিপটন। এখন আমি লিপটনের। তোমার টাকা শোধ হয়ে গেছে। তুমি আর আমাকে ডাকবা না। ডিস্টার্ব করলে ভাল হবে না। রিকশার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে থাকে সবুজ। ওই ঘটনা ঢাকা জজকোর্ট চত্বরের। সবুজের কাছ থেকে জানা গেল, লিপি একজন নিশিকন্যা, কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় তার নিয়ন্ত্রণে রাতের যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতো। তার আয়ের টাকার ভাগ নিতো সবুজ। কেন তার আয়ের টাকার ভাগ নিতো? সবুজের জবাব, সে ছয় মাস আগে ২ হাজার টাকা ধার দিয়ে লিপিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। কথা ছিল পুলিশে ধরলে থানায় নেয়া বা কোর্টে চালান দেয়ার আগে তাকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। কিন্তু এবার পুলিশে ধরলে তাকে থানা থেকে ছাড়াতে পারেনি। পুলিশ অনেক টাকা চেয়েছিল। সবুজের আগেই তার এলাকার লিপটন কোর্টে এসে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে তাকে। হয়তো লিপটন আরও কিছু বেশি টাকা ধার দিয়েছে। এখন লিপির আয়ের ভাগ খাবে সে। কথাগুলো বলতে বলতে হেঁটে চলে যায় সবুজ।
সন্ধ্যা হয় হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের আম গাছতলায় তুমুল ঝগড়া চলছে। দুই নিশিকন্যা বনাম এক পুরুষ। দুই নিশি কন্যা একযোগে চেঁচিয়ে বলছে, তোমার মতো মালিকের দরকার নাই, পুলিশকে টাকা দেবো, গায়েও বেত খাবো, তা হলে গতর খাটানো টাকা তোমাকে দেবো কেন? মানিকের আন্ডারে যারা আছে তাদের তো পুলিশে তাড়ায় না, পুলিশে মারে না। পরিষ্কার কথা এখন থেকে- টাকা হয় পুলিশকে দেবো না হয় তোমাকে দেবো, দুই দিক টাকা দিতে পারবো না, নইলে আমরা মানিকের কাছে চলে যাবো, তোমার টাকা তুমি নিয়ে যাও। ওই উক্তিগুলো ঢাকা শহরের নিশিকন্যা ও তাদের মালিকদের।
ঢাকা শহরের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত এলাকায় বিচরণ বহু সংখ্যক নিশিকন্যার। এদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই পুলিশের কাছে। ঢাকা শহরের ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুসারে রাজধানীতে আছে দুই থেকে আড়াই হাজার নিশিকন্যা। কেবলমাত্র রাতের বেলাতেই এরা কাজে নামে বলে এদের পরিচিতি নিশিকন্যা হিসেবে।  যৌনকর্মীদের সংগঠন সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক ইন অব বাংলাদেশের সভানেত্রী আলেয়া বেগম জানালেন, তাদের পরিসংখ্যান অনুসারে রাজধানী শহরে নিশিকন্যাদের সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। তার মতে ওই সংখ্যা সব সময় ঠিক থাকে না, বেশি মাত্রায় পুলিশি যন্ত্রণা হলে ওরা ব্যবসা ছেড়ে চলে যায়। সে সময় নিশিকন্যাদের সংখ্যা কমে যায়। আবার পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সংখ্যা বাড়ে।
দিনের বেলায় এরা ঘুমায় বিভিন্ন পার্ক কিংবা ফুটপাতে। বিকাল থেকে শুরু হয় এদের সাজগোজ। পার্ক বা ফুটপাতে বসে ছোট্ট একখানা আয়না সামনে মেলে ধরে পরিপাটি করে চুল আঁচড়িয়ে, কড়া লাল রঙের লিপিস্টক ঠোঁটে মেখে কখনও দলবেঁধে, কখনও একা একা রাস্তার মোড়ে দাঁড়ায় খদ্দেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। কেবল ব্যস্ততম সড়কগুলোর মোড়ে মোড়েই নয় খদ্দের ধরতে অনেক সময় এদের দেখা যায় নিরিবিলি ওভারব্রিজগুলোর ওপর।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী শহরের প্রেস ক্লাব এলাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে, হাইকোর্টের দক্ষিণ পাশের রাস্তা, গুলিস্তান এলাকা, কাকরাইল মোড় এলাকা, রাজমণি সিনেমা হল এলাকা, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর মাজার রোড, কাকলী এলাকা, বিমানবন্দর এলাকা, মহাখালী মোড় এলাকা, বুড়িগঙ্গা সেতু, ওসমানী উদ্যান, রমনা পার্ক, সরওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, শ্যামলী ওভারব্রিজ, ধানমন্ডি লেক পাড়, কুড়িল বিশ্বরোড, শাহবাগ এলাকা সহ ঢাকার আরও কিছু এলাকায় অবাধ বিচরণ নিশিকন্যাদের।
ওই সব নিশিকন্যা, তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মাস্তান পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে নিশিকন্যাদের ক্রীতদাসী হওয়ার কাহিনী। প্রতিটি এলাকাতেই নিশিকন্যাদের নিয়ন্ত্রণ ওই এলাকার মাস্তান যুবকদের হাতে। তাদের আয়ের ভাগ দিতে হয় ওই সব মাস্তান যুবকদেরকে। তাদেরকে ভাগ না দিলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়, কখনও কখনও মার খেয়ে পঙ্গু হতে হয়। সূত্র মতে আবার একই এলাকায় আছে মাস্তান যুবকদের একাধিক গ্রুপ। তাদের মধ্যে নিশিকন্যারা বেচা বিক্রি হয়। ওরা পুঁজি বিনিয়োগ করে। বেশি টাকা দিয়ে একজনের নিয়ন্ত্রণে থাকা নিশিকন্যাকে কিনে নেয় আরেক জন। নিশিকন্যাদের হাত বদল হওয়ার সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে আদালত চত্বর। কোন সময় কোন নিশিকন্যাকে পুলিশে ধরে আদালতে সোপর্দ করলে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনে তাদের মালিকরা। আদালতে কাজ করে এমন একজন পুলিশ এই প্রতিবেদককে বলেন, নিশিকন্যারা আদালতে আসার পর তাদের জামিন করাতে দ্রুত আদালতে চলে আসে তাদের মালিকরা। তারাই মুহুরী আইনজীবী ঠিক করে জামিনে ছাড়িয়ে নেয়, আদালত জরিমানা করলে তারাই জরিমানার টাকা শোধ করে দেয়। এখানে দেখা যায় কোন কারণে গ্রেপ্তার হওয়া নিশিকন্যার মালিক সঠিক সময়ে আদালতে পৌঁছতে না পারলে ওই এলাকার বা অন্য এলাকার কোন মালিক তাকে জামিন করিয়ে তার জিম্মায় নিয়ে যায়। প্রয়োজন হলে আগের মালিকের কাছ থেকে নেয়া টাকা শোধ করে দেয় নতুন মালিক। ওই পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকার নিশিকন্যাদের নিয়ন্ত্রণকারী মালিকদের এজেন্ট আছে আদালত চত্বরে, এদের বেশির ভাগ মুহুরী। কোন মেয়েকে আদালতে আনা হলে ওই সব এজেন্ট ফোন করে জানিয়ে দেয় তার লোককে। দ্রুত এসে তারা জামিন করিয়ে নিশিকন্যাকে নিয়ে নেয় তাদের জিম্মায়।
 সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রেস ক্লাব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ও হাইকোর্ট এলাকার নিশিকন্যাদের নিয়ন্ত্রণ করে মানিক ও বিল্লাল নামের দুই যুবক। কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকার নিশিকন্যাদের নিয়ন্ত্রণ লিপটন, সবুজ, সালু ও গেটু সালামের হাতে। ফার্মগেট এলাকার নিয়ন্ত্রণ নুর সালামের হাতে, কাকরাইল মোড় ও রাজমনি সিনেমা হল এলাকার নিশিকন্যাদের আয়ের ভাগ নেয় কাবুল, সোনা। রমনা পার্ক এলাকায় নিশাত, নিয়ন, কালা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকার শিপন, নতুন, বিমল সহ ৮ জন। চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় আসাদ, বিজু সহ আরও ৯ জন। মিরপুর মাজার রোডে নিশিকন্যাদের নিয়ন্ত্রণ মহিলাদের হাতে। পুরনো নিশিকন্যারা ভাগ নেয় নতুন নিশিকন্যাদের যৌন কর্মের আয়ের টাকার।
ভোলার সালমা প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীতে ক্রীতদাসী নিশিকন্যা হিসেবে কাজ করছে কাকরাইল এলাকায়। তার সঙ্গে কথা হয় কাকরাইল মোড়ে এসএ পরিবহনের সামনে দাঁড়িয়ে। সালমা জানান, এক বছরে তিন বার হাত বদল হয়েছে তার। প্রথমে ঢাকায় আসার পর দেড় হাজার টাকা দিয়ে একজন কিনে নিয়েছিল তাকে, তার আয়ের প্রায় পুরোটাই নিয়ে নিতো ওই যুবক। মাঝে মধ্যে অত্যাচারও করতো। সালমা গোপনে ওই এলাকারই আরেক মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছে চলে যায়। ওই মালিক তাকে দেয় পাঁচ হাজার টাকা। সালমা তৃতীয়বার মালিক বদল করে গত মাসে। সাত হাজার টাকা নিয়ে এবার জায়গা বদল করে চলে এসেছে ওসমানী উদ্যান এলাকায়।
দুঃখের সঙ্গে সালমা বলেন, নিজের খতর খাটিয়ে খাবো তারও উপায় নেই, সেখানেও বিক্রি হয়ে যেতে হবে, ভাগ দিতে হবে আয়ের টাকার। এমনই জীবন, এমনই ভাগ্য!
মানবজমিন, বৃহস্পতিবার, ০১ নভেম্বর ২০১২

আদালতে ভিকারুননিসার ধর্ষিত ছাত্রীর জবানবন্দি

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পরিমল জয়ধর। শুধু তাই নয়, উলঙ্গ করে ছবি তুলে রাখে। ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আরও কয়েক দিন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পরিমল। এ ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার ১০ম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে ২০১১ সালের ২৮শে মে প্রথম দফায় ধর্ষণ করে। এরপর ১৭ই জুন ধর্ষণ করে। ওই ছাত্রী ২০১১ সালের ১৭ই জুলাই ১২২ ধারায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা পারভীনের আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে তা শিউরে উঠার মতো। ওই ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন। ৫ই জুলাই ভিকারুন নিসা কর্তৃপক্ষ পরিমলকে চাকরিচ্যুত করে। ২০১১ সালের ৫ই জুলাই পরিমলকে এক নম্বর, বসুন্ধরা শাখার তৎকালীন প্রধান লুৎফুর রহমানকে ২ নম্বর ও ভিকারুন নিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে ৩ নম্বর আসামি করে বাড্ডা থানায় মামলা করেন ছাত্রীর পিতা। ৬ই জুলাই পরিমলকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিমল বর্তমানে কারাগারে। ১৪ই জুলাই তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ করে সিনিয়র শিক্ষক আম্বিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেয় পরিচালনা পর্ষদ। ওইদিনই ভেঙে দেয়া হয় পরিচালনা পর্ষদ। এরপর ১৪ই জুলাই অধ্যক্ষ পদে  নিয়োগ দেয়া হয় মঞ্জুয়ারা বেগমকে। পরে হোসনে আরা বেগম ও লুৎফুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই ছাত্রী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বলে, ‘স্যার (পরিমল) প্রথম আমাদের ক্লাসে পড়াতে আসে গত বছর শেষের দিকে। বাংলা পড়াতো, খুব ভাল পড়াতো, ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিমল স্যার আমাকে চিনে। আমাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতো। আমাকে সে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতো। ক্লাস টেনের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় বাংলা ২য় পত্রে ভাল নম্বর না পাওয়ায় স্যারকে জিজ্ঞাসা করি ব্যাচে পড়াবে কিনা? স্যার ব্যাচ শুরু করার পর আমি ও আমার বন্ধু (নাম...) ব্যাচে পড়তে শুরু করি। সপ্তাহে তিন দিন, সকাল ১০টা থেকে পড়তাম। পড়ার সময় স্যার প্রায়ই বলতো তোমাকে সুন্দর লাগছে? মাথায় ও গালে হাত দিতো। অনেক সময় ব্যাচের পড়ার পর আমার প্র্যাকটিক্যাল থাকলে আমি কোচিংয়ে অপেক্ষা করে পরে স্কুলে যেতাম। স্যারকে স্যার হিসেবে, খুব ভাল পড়াতো বলে পছন্দ করতাম। স্যার অনেক সময় কোচিংয়ে দেরি করে আসতো। আমি স্যারকে ফোন করে তারপর কোচিংয়ে আসতাম। ২৮/০৫/২০১১ তারিখ আমি দেরিতে কোচিংয়ে যাই। গিয়ে দেখি ২টা চ্যাপ্টার পড়ানো হয়েছে। আমি গিয়ে শেষ ১টা চ্যাপ্টার পাই। ছুটি হওয়ার পর স্যার বলে বসার জন্য। যে ২টা চ্যাপ্টার মিস হয়েছে তা বুঝিয়ে দেবে। আমি বসি। পরিমল স্যার আমাকে কিছু পড়ানোর পর আমার গালে হাত দিয়ে বলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তারপর সে দরজা বন্ধ করে দেয়। বইপত্র সামনে থেকে সরিয়ে ওড়না দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করি। আমি হাত দিয়ে ছোড়াছুড়ি করি। আমার ডান হাত আগে থেকেই ভাঙা। স্যার আমার ডান হাত পেছনে নিয়ে মোচড় দেয়। তারপর দুই হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে নিচে ফেলে দেয়। আমার পায়জামা খুলে ফেলে। হাত বাঁধা থাকায় জামা খুলতে পারে নাই। জামা বুকের উপর তুলে ফেলে। ওই অবস্থায় মোবাইল দিয়ে ছবি তোলে। তারপর আমার দুই পা চেপে গায়ের উপর ওঠে। আমাকে রেপ করে। তারপর হাত খুলে দেয়। আমাকে বসিয়ে, বলে পড়া কন্টিনিউ করবা, কেউ যেন কিছু না জানে। জানলে ইন্টারনেটে ছবি দিয়ে দেবো। তোর বদনাম হবে, আমার কিছু হবে না। বাসায় যাই। আমি ভয়ে কিছু বলিনি। আমার আপু জিজ্ঞাসা করে, আমি ভয়ে বলতে পারিনি। আমি স্যারের কোচিংয়ে যেতাম। স্যার আমার সামনে, বা পাশে বসতো। টেবিলের নিচ দিয়ে পা দিয়ে আমার পা চাপতো। ১৭ই জুন ১১টার সময় পরিমল স্যারের ওখানে যাই, গিয়ে দেখি ১টা ব্যাচ পড়াচ্ছে। আমাকে বিশ্বজিৎ স্যারের রুমে বসতে বলে। ওই রুম থেকে পরিমলের রুম দেখা যায় না। আমি বসেছিলাম। স্যার এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি না করি। বলে বেশি কথা বলবি না। আমি দাঁড়িয়ে বের হতে চাইলে ধাক্কা দেয়। আমি দেয়ালে ব্যথা পাই। আমাকে গালে, হাতে চড় মারে। হাতে চাপ দেয়। আমার মাথা ঘুরছিল। পায়জামা খুলে আমাকে রেপ করে। আমি বাসায় চলে আসি। ১৭ (১৭ই জুন) তারিখে আমার হালকা ব্লিডিং হয়। আমার আপু হাতে চাপের দাগ দেখে জিজ্ঞাসা করে, আমি ভয়ে কিছু বলিনি। ১৯শে জুনই স্কুলে যাওয়ার পর আমি টিচার্স রুমে গেলে স্যার আমাকে ১০০ টাকা দেয়। বলে বার্থ পিল খেয়ে নিস। ১৯শে জুন লাস্ট ক্লাসে আমি আমার বান্ধবীকে (নাম...) সব ঘটনা বলি। ওরা আমাকে বলে হেড স্যারকে বলার জন্য। ২০শে জুন লুৎফর স্যার স্কুলে আসেনি। ২১শে জুন লুৎফর স্যারকে জানাই। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি সব ঘটনা বলি। হেড স্যার বলেন ‘আমি দেখব’। স্যার জিজ্ঞাসা করে বাসায় জানাইছি কিনা। কয়েকবার লুৎফর স্যার আমাকে ডাকে। পরিমল স্যার পরদিন আমাকে ডাকে। হেড স্যারকে কিছু বলছি কিনা জিজ্ঞাসা করে আমাকে। আমি অস্বীকার করি। আমাকে বলে জানিস না, এসবতো এখন সবাই ইচ্ছে করে। ২৩শে জুন হোসনে আরা আপা প্যারেন্টস (অভিভাবক) মিটিংয়ে আসে। তাকে লুৎফর স্যার সব জানান। আমি দু’দিন স্কুলে যাইনি। ওই দু’দিন স্কুলে সব জানাজানি হয়ে যায়। স্কুলের মর্নিংয়ের হেড আপা আমার বান্ধবীকে (নাম...) নিয়া জিজ্ঞাসা করে। অন্য আপারাও ওকে জিজ্ঞাসা করে। আমার বান্ধবীর (নাম...) বাবা-মা আমাদের বাসায় গিয়ে মাকে জানায়। দাদা ভাইকেও সব জানায়।