Sunday, March 14, 2010

ইডেন নেত্রীদের অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং...

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কোন্দল ও আধিপত্যের লড়াইয়ে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। নিঝুম-তানিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কলেজে ভর্তি বাণিজ্য করে। টাকা নেয়, টেন্ডারবাজি করে। নানা ধরনের কাজ বাগিয়ে আনে। বিটিভির স্লট কিনে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করে এ গ্রুপ। এজন্য তারা ব্যবহার করে নতুন ছাত্রীদের। তাদের দেখানো হয় আগামী দিনের নেতা হওয়ার স্বপ্ন। সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন। এসব স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন নেতার বাসায়। বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন হোটেলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের বাধ্য করা হয় বিভিন্ন নেতার মনোরঞ্জন করতে। অবশ্য তানিয়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, এসব করি না। এগুলো ঠিক নয়। উল্টো তিনি অভিযোগ তুলেছেন হ্যাপী-শর্মী গ্রুপের বিরুদ্ধে। তানিয়া বলেছেন, ওরা বহিষ্কৃৃত। ওরাই এসব করে। ওদের একজনের দু’টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। একাধিক মহিলা হোস্টেল চালায়। সেখানেও বিভিন্ন ছাত্রীদের ব্যবহার করে। নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ বাগিয়ে নেয় তারা। ভর্তি বাণিজ্য আমরা করি না, ওরাই করে। ওদের একজন এমন কোন কাজ নেই যা করে না। আর হ্যাপী মেয়েদের দিয়ে হোস্টেল চালানোর নামে ব্যবসা করে। ওদিকে হ্যাপী বলেছেন, নিঝুম-তানিয়া গ্রম্নপের কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তারা প্রিন্সিপালের সঙ্গে মিলেই সব অন্যায় করে। অন্যায় সহ্য করে প্রিন্সিপাল। তারা যা আয় করে সব ভাগ-বাটোয়ারা করে। তারা আমাদের বহিষ্কার করার দাবি করে। তারা তো আমাদের বহিষ্কার করতে পারে না। ওই এখতিয়ার নেই। ওরা এমন কোন কাজ নেই করতে পারে না। শুক্রবার রেশমি ও শ্রাবণী নামে যে দুই ছাত্রীকে নিঝুম ও তানিয়া গ্রুপ মারধর করেছে তাদের দু’জনকে হলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। তারা নিখোঁজ থাকার ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইডেন কলেজে এখনও দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। সেখানে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে রয়েছেন গোয়েন্দারা। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজা চৌধুরী ছুটিতে আছেন। ১৫ই মার্চের পর কলেজে যোগ দেবেন। তার অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ভাইস প্রিন্সিপাল আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি বলেছেন, আমি এসবের কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘটনা যা ঘটেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে দুই গ্রুপের আধিপত্যের লড়াই। তারা আমাকে তাদের দাবি-দাওয়া কিছু জানায়নি। এর আগেই তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, নিঝুম ও তানিয়ার অ্যান্টি গ্রুপের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করতে হবে। এটা এখন চাইলেই করতে পারব না। এটা তাদের পলিটিক্যাল ব্যাপার। আমরা কি করতে পারি? তিনি বলেন, তাদের আধিপত্যের লড়াইয়ের কারণে কলেজের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।

হ্যাপী বলেন, মিশু নামের এক ছাত্রীকে নিঝুম অফার করেছিল এক নেতার বাসায় নিয়ে যাওয়ার। তাকে দেখানো হয়েছে নানা রকমের লোভ। না যাওয়াতে নির্যাতন করা হচ্ছে। মিশু বলেন, আমি দারুণ হতাশা ও টেনশনের মধ্য আছি। ওরা আমাকে এমন এক নেতার বাসায় নিতে চেয়েছিল যে নেতা খুবই ক্ষমতাশালী। ওই নেতা অনেক কারণেই বিতর্কিত। তার বাসায় যাইনি বলে আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার মতো আরও অনেক মেয়েকেই এ ধরনের অফার দেয়া হয়। আমি যাইনি। সবাই তো এক রকম না। আমাকে নানা রকমের লোভ দেখানো হয়। তিনি বলেন, কলেজে অনেক মেয়েই তাদের কারণে নির্যাতিত।

সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা সুলতানা হ্যাপী বলেন, নিঝুম ও তানিয়ার দাবি, তারা আমাকে ও শর্মীকে বহিষ্কার করেছে। তারা আমাদের বহিষ্কার করতে পারে না। কারণ আমাদের কোন অন্যায় থাকলে বহিষ্কার করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করে পাঠাবে। নগর কমিটি অনুমোদন দিলে এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা তা করেনি। তারাই আমাদের বহিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, আমরা অন্যায় করলে তারা আমাদের শোকজ দিতে পারে। তা দেয়নি। হ্যাপী বলেন, আমরা শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের ব্যানারে ফুল দিতে গিয়েছিলাম- এতে নাকি আমাদের অন্যায় হয়েছে। আমরা ছাত্রলীগ করি, আমরা সেখানে গেছি। কোন অন্যায় করিনি। তিনি বলেন, এটা একটা অজুহাত। প্রধান সমস্যা হচ্ছে নিঝুম-তানিয়া ও কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম এরা তিনজন মিলে ভর্তি বাণিজ্য করে। গত বছর ৭০০, এবার ৯০০ ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের ৯০০’র মধ্যে আমাদের কমিটির ১৬ জনকে ৪০টা সিট দেয়া হয়েছে। ওই সিট দেয়ার কারণে আমরা বেশির ভাগই নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত জনদের ভর্তি করেছি। সেখানে ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে তারা তিনজনে মিলে ৮৬০ জন ছাত্রী ভর্তি করেছে। কিছু ফেয়ার ছাড়া সবাই তদবিরে হয়েছে। এক একজন ছাত্রীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। এতে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। ওই টাকার ভাগ বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছে। আমরা এই বাণিজ্য বন্ধ করতে চাই। কলেজ তাদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিঝুম-এর ছাত্রীত্ব নেই কলেজে। তারপর সে কলেজে থাকছে এবং কলেজের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি। প্রকৃতপক্ষে তার স্টুডেন্টশিপ এখন নেই। বিভিন্ন জনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই তিনি কলেজে আছেন। হ্যাপী বলেন, যে সব মেয়ে সুন্দরী, ফিগার আকর্ষণীয়, একটু অভাবী, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই ও উচ্চাভিলাষী- ওসব মেয়েকে ওরা টার্গেট করে। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বলে নেয়া হয় তারা নেতার কাছে যাচ্ছেন কাজের জন্য। চল তোমাকে নিয়ে যাই। পরিচয় করিয়ে দেবো, নেতা চিনলে লাভ হবে। নেত্রী হতে পারবে। সেখানে গেলে অনেককেই মাশুল দিয়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই কলেজে এসব হচ্ছে।

এদিকে হ্যাপী-শর্মী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগের বর্তমান সেক্রেটারি তানিয়া। তিনি বলেন, ওরা কলেজ ছাত্রলীগের কেউ নয়। ওরা আমাদের দলের ছিল। এরপরও ওরা শহিদ মিনারে ফুল দিতে গেছে ছাত্রলীগের পাল্টা ব্যানারে। পাল্টা গ্রুপে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার কারণেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যায় করলে আমাদেরকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা কোন মেয়েকে জোর করে নেতার বাড়িতে নিয়ে যাই না। আমাদের ছাত্রীরা নেতা মানে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা আমাদের দেখতে হয়। আমাদের কর্মী রয়েছে, তাদের আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতেই পারি, নিয়ে যাওয়া মানে এই নয় কিছু হয়। এদিকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চম্পা বলেন, হ্যাপী-শর্মী আমরা একসঙ্গে আছি। সকাল থেকে আমরা বাইরে আছি। কলেজের অবস্থা ভাল নয়। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কলেজে দুর্নীতিমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ সব অন্যায় কাজ বন্ধ করতে হবে। আমরা আমাদের কথাগুলো কলেজের প্রিন্সিপালকে বলতে পারি না। তিনি আমাদের কোন কথাই শুনতে চান না। তারা নিঝুম ও তানিয়ার কথা শোনেন। তারা যেহেতু সভাপতি-সেক্রেটারি তাই তাদের মন যুগিয়ে প্রিন্সিপালকে চলতে হয়। তিনি ওদের অন্যায় কাজের সহায়তা করছেন বলে আমরা অসহায়।

৪ নেত্রী বহিষ্কার- রাজধানীর সরকারি ইডেন কলেজে সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাসায় পাঠানো, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের সূত্রে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় ইডেনের চার নেত্রীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। একাধিক ছাত্রী ও ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী অভিযোগ করেছেন, শুধু নেতাদের বাসায় নয়, বিভিন্ন শিল্পপতি এবং আজিমপুর, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকার ব্যবসায়ীদের বাসায়ও পাঠানো হয় ছাত্রীদের। এতে রাজি না হলে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এড়্গেত্রে বেছে নেয়া হয় ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী, প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের। কেউ রাজি না হলে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে হল থেকে বের করা দেয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, তাকে এক নেতার বাসায় যেতে বলা হয় গত সপ্তাহে। প্রসত্মাবে রাজি না হওয়ায় মধ্যরাতে তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে হল থেকে সকালে বের করে দেয় সভাপতি নিঝুম। একটি পক্ষ বলছে, কলেজের সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়া ভর্তি বাণিজ্য ছাড়াও ছাত্রীদের দিয়ে নানা অপকর্ম করাচ্ছেন। আবার সভাপতি গ্রম্নপ বলছে, তাকে সরাতে কয়েকজন নেত্রী তার বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নানা তদবির করতেই ছাত্রীদের বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানো হয়।

নারী কেলেঙ্কারি, অভিযোগের পাহাড়: কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতা ও নেত্রীর বিরুদ্ধে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের নবাগত নেত্রীদের বিভিন্ন ভাবে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন তদবিরের জন্য নেতাদের বাসায় নিয়ে যায় ছাত্রীদের। যেসব নেতার নিজস্ব বাসা নেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পরিচিত কয়েকটি আবাসিক হোটেলে। মিছিলে নিয়ে আসা নিত্যনতুন ছাত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানোর পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আসীন ব্যক্তিদের বাসায়ও পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবসা করে থাকেন কয়েকজন নেত্রী। এছাড়া কেন্দ্রীয় এক শীর্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতার বিরম্নদ্ধে রয়েছে একই ধরনের অভিযোগ।

আতঙ্কের রাত বৃহস্পতিবার: ইডেনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ এবং জুনিয়র কর্মীদের কাছে বৃহস্পতিবার রাতটি আতঙ্কের। নেতাদের বাসায় যাওয়ার ভয়ে অনেক ছাত্রী ক্লাস থেকে আর হলে ফেরে না। আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যায় নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে। ওইদিন বিকাল হলেই তাদের কদর আর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। নেত্রীরা খোঁজাখুঁজি করে তাদের আদর-যত্ন করে ঠিকানা ধরিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের সামনে আবার পলাশী, নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেত মোড়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার অপেক্ষা করে। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ছাত্রী এবং সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের নেতাদের বাসায় পাঠানোর অভিযোগের ব্যাপারে জানা যায়, মূলত বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানো হয় তদবির সফল হওয়ার জন্য। এসব নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে নেতাদের বাসায় নিজেরা যাতায়াতের পর এখন অন্যদের পাঠান। বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের তদবির বাগিয়ে নেন। এই একই অভিযোগ বদরুন্নেসা কলেজের নেত্রীদের ব্যাপারেও। এ ব্যাপারে ইডেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, সভাপতি নিঝুম কয়েকদিন আগে তাকে এক নেতার বাসায় যেতে বলেন। তার আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় মধ্যরাতে তিনি নিঝুমের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। ওই ছাত্রী আরও জানান, এক্ষেত্রে চাহিদা বেশি প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের। সুন্দরী ছাত্রীদের বলপ্রয়োগ করে বিভিন্ন নেতা ও ব্যবসায়ীর বাসায় পাঠানো হয়। অনেকে আবার লংড্রাইভ এবং বিভিন্ন পর্যটনস্থলে অবসর যাপনে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার এলে এই অত্যাচার বেশি বাড়ে। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী লাবণী আক্তার বলেন, আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথামতো না চলায় আমাকে শিবির বানিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে সব ধরনের অফার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নবম শ্রেণীর মেয়েদেরও হলে রেখে তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শিবির বলে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী চম্পা খাতুন বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে সমপ্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। এছাড়া তারা ছাত্রীদের দিয়ে সব ধরনের অপকর্ম করছে। প্রতিটি ছাত্রীকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কবল থেকে বের হয়ে ছাত্রীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া এই চক্রটি ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাত থেকে বাঁচতে আমরা নানা পথ খুঁজেছি। আমরা তাদেরই গ্রম্নপ করতাম। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আমরা প্রতিবাদ করেছি।

বহিষ্কারের কারণ: এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইডেনের সহসভাপতি চম্পা খাতুন, সাংগঠনিক সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপি, শারমিন সুলতানা শর্মী ও সহসম্পাদক কানিজ ফাতেমাকে সংগঠন বহির্ভূত কাজ করার দায়ে বহিষ্কার করা হয়। এই চারজন নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়ার বিরম্নদ্ধে আন্দোলন করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরম্নদ্ধে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও বহিষ্কার করা হলো নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে অবস্থান নেয়া চার নেত্রীকে। বহিষ্কৃত চার নেত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। সভাপতি একা এ ধরনের সিদ্ধানত্ম নিতে পারেন না। তারা বলেন, এটি গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ। আমরা নির্যাতিত ছাত্রীদের পড়্গে অবস্থান নিয়েছি। যারা ছাত্রীদের দিয়ে ব্যবসা করাচ্ছে তাদের বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া নিয়মবহির্ভূত কাজ।

বদরুন্নেসারও একই চিত্র: কয়েকদিন আগে একই ভাবে ইডেনের মতো বদরুন্নেসা কলেজেও দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই কলেজের নেত্রীদের ব্যাপারে অভিযোগ, তারা ছাত্রীদের ধরে ধরে হোটেলে বা বাসায় পাঠিয়ে থাকেন। এতে কেউ রাজি না হলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়াসহ মারপিট পর্যনত্ম করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়া ছাত্রীদের ‘শিবির’ সমর্থক বলে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা পর্যনত্ম ঘটছে।

নানা বাণিজ্য: ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে সভাপতি নিঝুম ও তানিয়া ইডেনে ৯০০ ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করায়। প্রত্যেকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ম কড়াকড়ি করায় সরাসরি ভর্তি না করতে পেরে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে ৭০০ ছাত্রীর সাবজেক্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা ব্যবসা করে। ছাত্রলীগের দেয়া তালিকা অনুযায়ীই সাবজেক্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় কলেজ প্রশাসন। এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে শুরম্ন করে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা নেয়া হয় প্রত্যেকের কাছ থেকে। এছাড়া নতুন করে কোন ছাত্রী হলে ওঠানোর জন্য কমপড়্গে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী মিশু বলেন, কয়েকদিন আগে হলে ওঠানোর জন্য প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রীর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে সভাপতি নিঝুম। ওই ছাত্রী একেবারে গরিব। বিষয়টি নিঝুমকে বললেও তাকে হলে ওঠানো হয়নি।

হল ছাড়ছেন ছাত্রীরা: শুক্রবার দু’গ্রম্নপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ ছাত্রীরা হল ছাড়তে শুরম্ন করেছেন। গতকাল সকাল থেকে হল গেটে অভিভাবকরা ভিড় করেন। ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রিতা বলেন, হলে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে। তাই আমার মতো অনেকেই হল ছাড়ছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট নারী নেত্রী আয়শা খানম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কী বলব লজ্জার কথা! এর চেয়ে দুঃখ, কলঙ্কজনক কিছুই হতে পারে না। আমি নিজেও একসময় ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ছিলাম। কিন্তু আমাদের সময়ে এই অপসংস্কৃতি ছিল না। আমরা এ রকম হেলেন জেরিনদের দেখিনি। এটা কোনো দলের বা সংগঠনের গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে এই কলঙ্কজনক সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কথার ফুলঝুরি নয়, অ্যাকশনে যেতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষক ও রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে।’

1 comment:

  1. TUMI KE AMR SHATY IN AN OPEN RELATIONSHIP KORBY AME TUMR SHATHY KORTY CHI JUDE TUMI RAJY THAKO? MY NAME: JIBRIL SHARIF (ROSE) ME COMPUTER IT. MY E-mail: jibrilsharif@yahoo.com MOBILE NO: +8801725949720 DIST: THAKURGAON, RANGPUR, BANGLADESH.

    Friendship

    To Our Friendship your impact in this world of ours cannot be overlooked, Friend In your own friendly way you meet and greet people. I'm so glad you're the way you are; you have a special talent for making others feel at home you're friendly. Open ways are much appreciated and draw others close here's to our friendship. So solid and unending . . . Together or apart through good times and bad you are always my friend.. Friendship Day is a time for showing our Friends what they mean to us. Friends are dear to the heart. Friendship Day gives us a chance to express our gratitude to our friends, who have been there in our dreams, in our sorrows and joys, in our jokes and stories. Friends are our precious assets. With true friends, our Life is like a flower that blossoms in the sunshine of happiness! You love Friend. But you’re No Name. Friend Life begins when any will so lat go mast But new friend.

    THIS IS FRIENDS MY CLEB Well-Come To Facebook Add and All so Facebooks Friends Open Bangladesh Public Sheba File: bangladeshpublicsheba@gmail.com

    ReplyDelete