ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে
পরিমল জয়ধর। শুধু তাই নয়, উলঙ্গ করে ছবি তুলে রাখে। ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে
দেয়ার হুমকি দিয়ে আরও কয়েক দিন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পরিমল। এ ঘটনা কাউকে
বললে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার ১০ম শ্রেণীর
ওই ছাত্রীকে ২০১১ সালের ২৮শে মে প্রথম দফায় ধর্ষণ করে। এরপর ১৭ই জুন ধর্ষণ
করে। ওই ছাত্রী ২০১১ সালের ১৭ই জুলাই ১২২ ধারায় ঢাকা মেট্রোপলিটন
ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা পারভীনের আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে তা শিউরে উঠার
মতো। ওই ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফুঁসে
উঠেন। ৫ই জুলাই ভিকারুন নিসা কর্তৃপক্ষ পরিমলকে চাকরিচ্যুত করে। ২০১১ সালের
৫ই জুলাই পরিমলকে এক নম্বর, বসুন্ধরা শাখার তৎকালীন প্রধান লুৎফুর রহমানকে
২ নম্বর ও ভিকারুন নিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে ৩ নম্বর আসামি
করে বাড্ডা থানায় মামলা করেন ছাত্রীর পিতা। ৬ই জুলাই পরিমলকে গ্রেপ্তার করে
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিমল বর্তমানে কারাগারে। ১৪ই জুলাই তৎকালীন
অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ করে সিনিয়র শিক্ষক আম্বিয়া খাতুনকে নিয়োগ
দেয় পরিচালনা পর্ষদ। ওইদিনই ভেঙে দেয়া হয় পরিচালনা পর্ষদ। এরপর ১৪ই জুলাই
অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয় মঞ্জুয়ারা বেগমকে। পরে হোসনে আরা বেগম ও লুৎফুর
রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই ছাত্রী মেট্রোপলিটন
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বলে, ‘স্যার (পরিমল) প্রথম আমাদের ক্লাসে পড়াতে আসে
গত বছর শেষের দিকে। বাংলা পড়াতো, খুব ভাল পড়াতো, ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে
পরিমল স্যার আমাকে চিনে। আমাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতো। আমাকে সে ‘মা’
বলে সম্বোধন করতো। ক্লাস টেনের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় বাংলা ২য় পত্রে ভাল
নম্বর না পাওয়ায় স্যারকে জিজ্ঞাসা করি ব্যাচে পড়াবে কিনা? স্যার ব্যাচ শুরু
করার পর আমি ও আমার বন্ধু (নাম...) ব্যাচে পড়তে শুরু করি। সপ্তাহে তিন
দিন, সকাল ১০টা থেকে পড়তাম। পড়ার সময় স্যার প্রায়ই বলতো তোমাকে সুন্দর
লাগছে? মাথায় ও গালে হাত দিতো। অনেক সময় ব্যাচের পড়ার পর আমার
প্র্যাকটিক্যাল থাকলে আমি কোচিংয়ে অপেক্ষা করে পরে স্কুলে যেতাম। স্যারকে
স্যার হিসেবে, খুব ভাল পড়াতো বলে পছন্দ করতাম। স্যার অনেক সময় কোচিংয়ে দেরি
করে আসতো। আমি স্যারকে ফোন করে তারপর কোচিংয়ে আসতাম। ২৮/০৫/২০১১ তারিখ আমি
দেরিতে কোচিংয়ে যাই। গিয়ে দেখি ২টা চ্যাপ্টার পড়ানো হয়েছে। আমি গিয়ে শেষ
১টা চ্যাপ্টার পাই। ছুটি হওয়ার পর স্যার বলে বসার জন্য। যে ২টা চ্যাপ্টার
মিস হয়েছে তা বুঝিয়ে দেবে। আমি বসি। পরিমল স্যার আমাকে কিছু পড়ানোর পর আমার
গালে হাত দিয়ে বলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তারপর সে দরজা বন্ধ করে দেয়।
বইপত্র সামনে থেকে সরিয়ে ওড়না দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে। আমি
চিৎকার করার চেষ্টা করি। আমি হাত দিয়ে ছোড়াছুড়ি করি। আমার ডান হাত আগে
থেকেই ভাঙা। স্যার আমার ডান হাত পেছনে নিয়ে মোচড় দেয়। তারপর দুই হাত পেছনে
নিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে নিচে ফেলে দেয়। আমার পায়জামা খুলে ফেলে। হাত বাঁধা
থাকায় জামা খুলতে পারে নাই। জামা বুকের উপর তুলে ফেলে। ওই অবস্থায় মোবাইল
দিয়ে ছবি তোলে। তারপর আমার দুই পা চেপে গায়ের উপর ওঠে। আমাকে রেপ করে।
তারপর হাত খুলে দেয়। আমাকে বসিয়ে, বলে পড়া কন্টিনিউ করবা, কেউ যেন কিছু না
জানে। জানলে ইন্টারনেটে ছবি দিয়ে দেবো। তোর বদনাম হবে, আমার কিছু হবে না।
বাসায় যাই। আমি ভয়ে কিছু বলিনি। আমার আপু জিজ্ঞাসা করে, আমি ভয়ে বলতে
পারিনি। আমি স্যারের কোচিংয়ে যেতাম। স্যার আমার সামনে, বা পাশে বসতো।
টেবিলের নিচ দিয়ে পা দিয়ে আমার পা চাপতো। ১৭ই জুন ১১টার সময় পরিমল স্যারের
ওখানে যাই, গিয়ে দেখি ১টা ব্যাচ পড়াচ্ছে। আমাকে বিশ্বজিৎ স্যারের রুমে বসতে
বলে। ওই রুম থেকে পরিমলের রুম দেখা যায় না। আমি বসেছিলাম। স্যার এসে দরজা
বন্ধ করে দেয়। আমি না করি। বলে বেশি কথা বলবি না। আমি দাঁড়িয়ে বের হতে
চাইলে ধাক্কা দেয়। আমি দেয়ালে ব্যথা পাই। আমাকে গালে, হাতে চড় মারে। হাতে
চাপ দেয়। আমার মাথা ঘুরছিল। পায়জামা খুলে আমাকে রেপ করে। আমি বাসায় চলে
আসি। ১৭ (১৭ই জুন) তারিখে আমার হালকা ব্লিডিং হয়। আমার আপু হাতে চাপের দাগ
দেখে জিজ্ঞাসা করে, আমি ভয়ে কিছু বলিনি। ১৯শে জুনই স্কুলে যাওয়ার পর আমি
টিচার্স রুমে গেলে স্যার আমাকে ১০০ টাকা দেয়। বলে বার্থ পিল খেয়ে নিস। ১৯শে
জুন লাস্ট ক্লাসে আমি আমার বান্ধবীকে (নাম...) সব ঘটনা বলি। ওরা আমাকে বলে
হেড স্যারকে বলার জন্য। ২০শে জুন লুৎফর স্যার স্কুলে আসেনি। ২১শে জুন
লুৎফর স্যারকে জানাই। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি সব ঘটনা বলি। হেড
স্যার বলেন ‘আমি দেখব’। স্যার জিজ্ঞাসা করে বাসায় জানাইছি কিনা। কয়েকবার
লুৎফর স্যার আমাকে ডাকে। পরিমল স্যার পরদিন আমাকে ডাকে। হেড স্যারকে কিছু
বলছি কিনা জিজ্ঞাসা করে আমাকে। আমি অস্বীকার করি। আমাকে বলে জানিস না,
এসবতো এখন সবাই ইচ্ছে করে। ২৩শে জুন হোসনে আরা আপা প্যারেন্টস (অভিভাবক)
মিটিংয়ে আসে। তাকে লুৎফর স্যার সব জানান। আমি দু’দিন স্কুলে যাইনি। ওই
দু’দিন স্কুলে সব জানাজানি হয়ে যায়। স্কুলের মর্নিংয়ের হেড আপা আমার
বান্ধবীকে (নাম...) নিয়া জিজ্ঞাসা করে। অন্য আপারাও ওকে জিজ্ঞাসা করে। আমার
বান্ধবীর (নাম...) বাবা-মা আমাদের বাসায় গিয়ে মাকে জানায়। দাদা ভাইকেও সব
জানায়।
Thursday, November 1, 2012
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment