Sunday, September 18, 2011

সিলেটে ‘বার্গার কিং’-এর আড়ালে ‘সেক্স মিশন’

নাম ‘বার্গার কিং’। একটি ফাস্টফুডের দোকান। সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারেই এই বার্গার কিংয়ের অবস্থান। ছোট ছোট বুথ। পাশাপাশি দু’টি টুল। চারদিকে রঙিন গ্লাস। রয়েছে থাই উডও। এরকম কয়েকটি বুথ। বুথের আগে ছিল বিছানা। বেশি দৃষ্টিকটু। এ কারণে হলো পরিবর্তন। পরিবর্তন করে করা হয় ছোট ছোট বুথ। এই বুথের ভাড়া ঘণ্টায় ৬০০ টাকা। বুথের ভেতরে কিছুই নেই। আছে পাশাপাশি দুটি চেয়ার। একটি ছোট টেবিল। সিলেট শহরের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের কাছে বার্গার কিং এক নামেই পরিচিত। ৬০০ টাকা ঘণ্টায় ভাড়া নিয়েই এখানে প্রেমিকাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তা করা যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জিন্দাবাজার এলাকার আলী ম্যানশনে বার্গার কিংয়ের আগে ওই রেস্টুরেন্টটির নাম ছিল বৈশাখী রেস্টুরেন্ট। প্রায় তিন বছর আগে ওই রেস্টুরেন্টের নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘বার্গার কিং’। এই রেস্টুরেন্ট নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। ফাস্টফুডের দোকান বলে এখানে সচরাচর সব শ্রেণীর গ্রাহক যেতেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, রেস্টুরেন্টের অবৈধ কার্যকলাপ তাদের নজরে আসে প্রায় ৪-৫ মাস আগে। ওই সময় ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন বার্গার কিংয়ের অন্তরালে ওখানে চলছে অবৈধ কর্মকাণ্ড। সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এহছানুল হক তাহের জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের নজরে বার্গার কিংয়ের অবৈধ কার্যকলাপ নজরে আসার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে তদারকি শুরু করেন। এ সময় দেখা যায়, স্কুল-কলেজের উঠতি মেয়েরা এখানে বেশি উঠে। এবং তাদের সঙ্গে থাকে তাদের বয়ফ্রেন্ড। তিনি জানান, এই কৌতূহল নিয়ে রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা ওই রেস্টুরেন্টে যান। ওই সময় সেখানে খাটের মতো লম্বা সাইজের অনেকটা হেলান চেয়ার পাওয়া যায়। এবং তারা দেখেন ওখানে খাটের উপর শুয়ে বিকিনি পরা অবস্থায় এক তরুণী শুয়ে আছে। এবং তার পাশে কনডম পাওয়া যায়। এ সময় ব্যবসায়ীরা খবর নিয়ে জানতে পারেন ওই তরুণী একজন অবৈধ দেহ ব্যবসায়ী। তাকে দিয়ে ওখানে টাকার বিনিময়ে অবৈধ কার্যকলাপ করা হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে ক্ষেপে যান ব্যবসায়ী নেতা তাহের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রেস্টুরেন্টের মালিককে ডেকে এনে সতর্ক করে দেন। ওই সময় প্রতিবাদের মুখে খাট আকৃতির হেলান চেয়ার সরানো হয়। পরে লম্বা পর্দা লাগিয়ে ছোট ছোট বুথ তৈরি করা হয়। এরপরও থেমে থাকেনি অবৈধ কার্যকলাপ। বুথের ভেতরেই চলতে থাকে অবৈধ কার্যকলাপ। স্কুল ও কলেজের তরুণীরা সহজভাবে বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে সেখানে উঠে ইজ্জত হারান। ব্যবসায়ীরা জানান, গত মঙ্গলবার বিকালের দিকে এক তরুণী তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওই রেস্টুরেন্টে উঠতে চাইছিলো না। তখন তার সঙ্গের তরুণটি তাকে টেনে হিঁচড়ে উপরে নিয়ে যায়। এ দৃশ্য ব্যবসায়ীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেন। তখন কেউ প্রতিবাদ না করলেও পুরো বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করেন। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা পর বার্গার কিং থেকে তরুণকে নিয়ে তরুণীটি নিচে নেমে আসে। নিচে নেমেই মেয়েটি কান্না শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা মেয়েটি বার্গার কিংয়ের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কাঁদে। ব্যবসায়ীরা জানান, তখন ওই মেয়েটিকে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এভাবে প্রতিদিন ঘটনা ঘটতো বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

স্রেফ রেস্টুরেন্ট ভেবে প্রেমিকের হাত ধরে ওখানে উঠেছেন অনেক তরুণী। কিন্তু ভেতরে গিয়ে অনেকেই হয়েছে প্রতারিত। পরে সব হারিয়ে কেঁদে কেঁদে বের হতে দেখা যায় অনেক তরুণীকেই। আর ওখানে যারা যেতেন তাদের বেশির ভাগই স্কুল কিংবা কলেজ ছাত্রী। ভেতরে সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় প্রেমিকের হাতেই বহু মেয়ে সম্ভ্রম হারিয়েছে। এমনটা জানিয়েছেন খোদ বার্গার কিংয়ের আশপাশের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, যেসব মেয়েরা এখানে যাতায়াত করতো তারা ভালো পরিবারের। সবাই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া মেয়ে। অভিভাবকদের ফাঁকি দিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে এখানে এসে তারা হারিয়েছে সবকিছু। বুথের ভেতরে প্রেমিকের নির্যাতনে তারা সব কিছু হারানোর পর সম্মানহানির ভয়ে মুখ খুলেননি। নীরবে সয়ে গেছেন সবকিছু। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা বার বার রেস্টুরেন্টের মালিককে বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত দুই দিন আগে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা আকস্মিক এই রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়েন। এ সময় তারা বুথের ভেতরে অস্বাভাবিক অবস্থায় যুবক-যুবতীদের দেখতে পান। ব্যবসায়ীরা জানান, যে অবস্থায় তাদের পাওয়া গেছে তা সিলেটে কল্পনা করা যায় না। এ দৃশ্য দেখে অনেক ব্যবসায়ীরা মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ার হাত থেকে সিলেটের আলোচিত এই বার্গার কিং দুই দিন থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের আগে বার্গার কিংয়ে বুথ ছিল না। ছিল বিছানাপাতি। ফুসলিয়ে প্রেমিকাকে নিয়ে এসে এখানে সর্বনাশ করা হতো। এভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয় বলে ধারণা করেন তারা। এর বাইরেও কিছু কিছু জুটি এখানে নিয়মিত যাতায়াত করতো। তারা নিরাপদ ডেটিং কিংবা সেক্স মিশনের নিরাপদ স্থান হিসেবে ‘বার্গার কিং’কে ব্যবহার করতো। বুথ ব্যবহারকারী এক যুবক জানান, এখানে সাইবার ক্যাফের মতো ছোট ছোট বুথ বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয় আগত জুটিদের। যাদের বেশির ভাগই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। ঘণ্টা ৬শ’ টাকা হারে ভাড়া নির্ধারণ করে এসব রুম বরাদ্দ দেয়া হয় তাদের। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টিনেজাররা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে এই বুথগুলোকে। জিন্দাবাজারস্থ ‘বার্গার কিং’ ফাস্টফুডের দোকানে অনেকদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছিল এমন অভিযোগ ছিল জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এর আগেও বেশ কয়েকবার এই প্রতিষ্ঠানের মালিককে সতর্ক করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। মঙ্গলবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লায়েছ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এহছানুল হক তাহের গিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে বার্গার কিংয়ের স্বত্বাধিকারী রোটারিয়ান একেএম শামসুল হক দীপু সাংবাদিকদের জানান, প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের হলেও তিনি এটি পরিচালনা করেন না। লোক দিয়ে পরিচালনা করায় তারা ভুল করে ফেলতে পারে। কিন্তু তিনি স্বীকার না করলেও প্রতিষ্ঠান আজ থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তার এই অভিযোগের বিরোধিতা করে সিলেট চেম্বারের পরিচালক ও জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লায়েছ উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তিনি নিজেই পরিচালনা করেন। এবং এসব কাজে তার সহযোগিতা রয়েছে। না হলে তাকে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও এরকম কর্মকাণ্ড পরিচালনা হওয়ার কথা নয়। জিন্দাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক তাহের জানান, সিলেট একটি পবিত্র এলাকা। এখানে এরকম কর্মকাণ্ড ব্যবসায়ীরা মেনে নেননি। তিনি জানান, বার্গার কিংকে স্রেফ রেস্টুরেন্ট মনে করে অনেক টিনেজ মেয়ে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে উঠতো। উঠার সময় হাসি মুখে উঠলেও নামার সময় কেঁদে কেঁদে নীরবে চলে যেতো।

No comments:

Post a Comment