Monday, September 9, 2013

ভুয়া বউ

ওদের পেশা বউ সেজে প্রতারণা। কখনও গ্রাম্য বধূ, কখনও ধার্মিক স্ত্রী, আবার কখনও প্রবাসী কনের ছদ্মবেশে বাসরঘর করে। সুযোগ বুঝে স্বামীর সবকিছু লুটে লাপাত্তা হয় ভোর হওয়ার আগেই। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সক্রিয় এমন অর্ধ শতাধিক ভুয়া পাত্রীর সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা প্রতিদিনই কারও না কারও বউ সেজে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। পুলিশের করা ভুয়া পাত্রীর তালিকায় আছে- ইরানী, মিশু, সালমা, শায়লা, মিতু, ডালিয়া, নদী, সাথী, তৃষ্ণা, ডেইজী ও তিশা। গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ চার ভুয়া পাত্রী আসমাউল হুসনা মিশু (২৪), সাদিয়া মিতু (২৭), সায়লা শারমীন (৩৬) ও সালমা (২৮)-কে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া তাদের চার পুরুষসঙ্গী এরশাদ (৩৮), আলমগীর হোসেন ওরফে বাদশা (৩৪), ইকবাল হোসেন (২৮) ও  জাহাঙ্গীর (৩৩) গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে  আরও ১০-১২ জন পাত্রী ঘটনাস্থল থেকে  পালিয়ে গেছে। গোয়েন্দারা জানান, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অপরূপ সাজে বসে থাকে তারা। প্রবাসী, ধনীর দুলালী, অভিজাত এলাকার গাড়ি-বাড়ির মালিক ও  ডিভোর্সি  থেকে শুরু করে ধার্মিক বোরকাওয়ালি বনে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। বিদেশ যেতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে দেখানো হয় ভিসা লাগানো পাসপোর্ট ছাড়াও অপরূপা পাত্রীর ছবি। চাইলে সশরীরে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতারণার শুরুতেই ম্যারেজ মিডিয়া নাম দিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে বসে তারা। পরে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে। বিত্তশালী ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে তাদের চাহিদা মোতাবেক পাত্রী হাজির করে। পরে পাত্রপক্ষকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রতারিত একাধিক পাত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় বাড্ডার আফতাব নগরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চার নারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ভুয়া পাত্রী মিশু, সায়লা, সালমা ও মিতু জানায়, ইরানী, মুন্নি ও  তিশার সিন্ডিকেটে অর্ধ শতাধিক নারী রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ায় স্ত্রী হিসেবে ভাড়া খাটে। বরের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি অংশ তারা পেয়ে থাকে। গোয়েন্দারা জানান, ‘প্রবাসী পাত্রীর জন্য পাত্র চাই’, ‘বিদেশে যেতে আগ্রহী এমন সৎ পাত্র চাই’, ‘বিদেশে বসবাসকারী পাত্রীর জন্য সুপাত্র চাই’ উল্লেখ করে নজরকাড়া বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বিদেশ গমনকারীদের দৃষ্টি কাড়ে তারা। আগ্রহী পাত্র ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে এই নারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় প্রবাসী পাত্রী হিসেবে। পাত্রপক্ষের বিশ্বাস অর্জন করতে প্রতারকরা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিক হিসেবে এই নারীদের ছবি লাগানো জাল পাসপোর্টও দেখিয়ে থাকে। অভিযানকালে আফতাবনগরের ওই বাসা থেকে প্রচুর নিকাহনামা, নোটারি পাবলিকের স্ট্যাম্প ও  পাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের ছবি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। অভিযান পরিচালনাকারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের  এডিসি, (পশ্চিম) আশিকুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ম্যারেজ মিডিয়া নামে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা প্রবাসী ভুয়া সুন্দরী মহিলাদের পাত্রী সাজিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের মূল হোতা এরশাদ গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ৫-৬ বছর ধরে বেশ কয়েকজন সুন্দরী মহিলাকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যাল্ড ও আমেরিকার নাগরিক বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পাত্র চাই মর্মে চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ লোকজন মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ‘কথিত কাউন্সিলর’দের মাধ্যমে তার ম্যারেজ মিডিয়ার অফিসে নিয়ে আসে। ওই সুন্দরী মহিলাদের জাল ভিসা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করানোর মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ভুয়া নিকাহনামার মাধ্যমে বিবাহ করিয়ে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করে। পরবর্তী সময়ে অন্যত্র অফিস নিয়ে আবারও ওই প্রতারণামূলক ব্যবসা শুরু করে। ধৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তাদের সঙ্গীয় প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্য ইরানী, মুন্নী, তিশা, সাগর ও  মিজান অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment