Tuesday, April 26, 2011

রামুতে পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ ডাকাত নিহত


কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে সশস্ত্র ডাকাতদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিনজন ও দু'দফা গণপিটুনীতে আট ডাকাত নিহত হয়। এছাড়া ডাকাতদের গুলিতে এক গ্রামবাসীও নিহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে উখিয়া সার্কেল এএসপি, ওসিসহ পাঁচ পুলিশ এবং কমপক্ষে অর্ধশত গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদশর্ীরা জানান, রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা গ্রামে দুবাই প্রবাসী নুরুল আলম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আলম ও এনায়েত উল্লাহদের পাকা ভবনের কলাপসিবল গেট কেটে ডাকাত দল লুটতরাজ চালায়। ডাকাতের প্রহারে গৃহকর্তা সৈয়দ আলম, তার ছেলে উখিয়া ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সৈয়দ মোহাম্মদ নোমান, ফজল করিম, এনায়েত উল্লাহ, আমানত উল্লাহ, আমিন উল্লাহ, মামুন, রফিক, শাহনাজসহ ১৬ জন আহত হন। ডাকাত দল এ সময় প্রায় ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ১০ লাখ টাকা ও অন্যান্য মালামালসহ কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আলমের লাইসেন্সকৃত একটি বিদেশী একনলা বন্দুক লুট করে নিয়ে যায়। রাত ২টার দিকে সংবাদ পেয়ে উখিয়া থানার ওসি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে ডাকাত পাকড়াও অভিযান শুরু করেন। রাত ৩টার দিকে উখিয়ার মরিচ্যা সীমানা সংলগ্ন রামুর পশ্চিম গোয়ালিয়া পালংস্থ জহিরজারমার ঝিরি পাহাড়ে অবস্থান নেয়া ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ডাকাতের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় গ্রামবাসী ডাকাত ধরতে পুলিশের সহায়তায় এগিয়ে আসে। এভাবে থেমে থেমে পুলিশ ও ডাকাতের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ চলতে থাকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। উখিয়া থানার ওসি নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ডাকাত দলের পূর্বপ্রস্তুতি থাকলেও পুলিশ ছিল সংখ্যায় কম ও তাদের গুলিও ছিল সীমিত। এরপরও পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত ডাকাতের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে উখিয়া সার্কেল এএসপি ছত্রধর ত্রিপুরা, রামু ও কক্সবাজার থানা পুলিশ ডাকাতের আশ্রয়স্থল ঘিরে ফেলে। এ সময় ডাকাত দলের এলোপাতাড়ি গুলিতে পশ্চিম গোয়ালিয়া পালং গ্রামের হাজী আবুল খাইয়ের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৫) ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিন ডাকাত নিহত হলে ডাকাত দল পাহাড়ি এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই উখিয়া ও রামু থানা থেকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে গ্রামবাসী পালিয়ে যাওয়া একদল ডাকাতকে ধাওয়া করে পাশর্্ববতর্ী মাঙ্গালাপাড়ায় আটক করে ব্যাপক গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার ডাকাত নিহত হয়। বেলা ১টার দিকে ওই ইউনিয়নের গোয়ালিয়াপালং গ্রামে পাহাড়ের টিলায় লুকিয়ে থাকা আরও চার ডাকাত ধরে গণপিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এ সময় তারাও মারা যায়। রামু থানার ওসি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন মিয়া জানান, দু'দফায় গণপিটুনিতে আটজন এবং পুলিশ-ডাকাত সংঘর্ষ চলাকালে অ্যানকাউন্টারে পড়ে তিন ডাকাত নিহত হয়। এএসপি ছত্রধর ত্রিপুরা বলেন, সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পুলিশ শতাধিক রাউন্ড ও ডাকাত দল অসংখ্য গুলিবর্ষণ করে। বন্দুকযুদ্ধে ডাকাতের গুলিতে এএসপি ছত্রধর ত্রিপুরা, ওসি নিয়াজ মোহাম্মদ, এসআই গোবিন্দ শুক্লদাশ, এসআই নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল রাসেল, মোশারফ, টুটুল ও খোকন গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে টুটুল ও খোকনকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ অপর অজ্ঞাত দুই ডাকাত মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে ডাকাত দলের সদস্য চকরিয়ার বাহাদুর, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সেলিম, উখিয়ার আক্তারের লাশ শনাক্ত করা গেলেও অপর আট ডাকাতের লাশ শনাক্ত করা যায়নি বলে উখিয়া থানার ওসি জানান।

No comments:

Post a Comment