Monday, April 18, 2011

জীবন দিয়ে সম্ভ্রম বাঁচাল ইয়াসমিন


জীবন দিয়ে অপবাদের লজ্জা ঢাকল কিশোরী ইয়াসমিন আক্তার। স্থানীয় কুচক্রীদের ঘৃণা জানিয়ে বিষপানে গতকাল আত্মহত্যা করেছে কৃষককন্যা ষোড়শী ইয়াসমিন। সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ঝাউডগী এলাকার নূরুল হক ডাক্তার বাড়িতে সে আত্মহত্যা করে। তার বাবা একই বাড়ির হতদরিদ্র কৃষক মো. মমিনউল্লাহ। ইয়াসমিন স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসার ছাত্রী। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহতের পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সফিকউল্লাহর ছেলে বখাটে জহিরউদ্দিনকে নূরুল হক ডাক্তারের বাড়ি থেকে গরুচুরির সন্দেহে আটক করে এলাকাবাসী। পরে স্থানীয় প্রভাবশালী সাফু মাঝি চুরির বিচার করবেন বলে এলাকার মাতবর নূরের জামান, লোকমান, দুলালসহ অনেকের কাছে মুচলেকা দিয়ে জহিরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। আজ সোমবার এ ঘটনার বিচার হওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার অভিযুক্ত জহিরকে চুরির অভিযোগ থেকে বাঁচানোর জন্য সাফু মাঝিসহ প্রভাবশালীরা কৃষক মমিনউল্লাহর (হাফেজিপড়ুয়া) কিশোরী কন্যা ইয়াসমিন আক্তারের নাম জড়িয়ে অপবাদ প্রচার করতে থাকে। তারা প্রচার করে, জহির ও ইয়াসমিনের গোপন সম্পর্কের কারণে শুক্রবার রাতে জহির দেখা করার জন্য ওই বাড়িতে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে ইয়াসমিনের মা হোসনেয়ারা বিষয়টি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন। বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরাও বিষয়টির সত্যতা জানতে চান। ষড়যন্ত্র করে তাকে জড়িয়ে অপবাদ প্রচার করায় অপমানে লজ্জায় সকালে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে সে।

হোসনেয়ারা বেগম বলেন, 'ওরা বাঁচার জন্য আমার মাইয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়। এই অপবাদ মানতে পারেনি, লজ্জায় আমার সরল মাইয়াডা বিষ খাইয়া মরছে। আমার মাইয়া বলেছে, তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই।'

প্রতিবেশী মো. সবুজ জানান, শুক্রবার রাতে ওই বাড়িতে গরু চুরি করতে এসে জহির ধরা পড়লে স্থানীয় মাতবররা সালিশ করার কথা বলে ছাড়িয়ে নেন। পরে ঘটনা এড়াতে মেয়েটিকে নিয়ে গোপন সম্পর্কের অপবাদ তোলা হয়, এতে লজ্জায় সে আত্মহত্যা করে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জানান, অপবাদ সইতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এর সঠিক বিচার চাই। এ ব্যাপারে স্থানীয় মাতবর সাফু মাঝিসহ অন্যদের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) খোরশেদ আলম বলেন, পোস্টমর্টেম ও ভিসেরা রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, পারিবারিক কলহ থেকে আত্মহত্যা করেছে, নাকি অন্য কোনো ঘটনার শিকার তা তদন্ত করা হচ্ছে
-বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৮ এপ্রিল ২০১১

No comments:

Post a Comment