Tuesday, February 19, 2013

ব্লগার রাজীব হত্যাকান্ড- দুই গার্লফ্রেন্ডকে ঘিরে রহস্য

স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে 'সহায়তাকারী' তরুণী তানজিলা ও রাফিকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে। তারা শোভনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে পুলিশ দাবি করছে। গত তিন দিন ধরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, তারা খুনিদের শনাক্ত করতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে। তারা কোন ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এ দুই তরুণীর মধ্যে কোনো একজন খুনিদের সহায়তাকারী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করতে চায়নি পুলিশ। এদিকে ঘটনার ৪ দিন পার হলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শোভনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। গত শুক্রবার রাতে পল্লবী থানাধীন পলাশনগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে নিহত হন স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার শোভন। এ ঘটনায় ওইদিন ভোরে তার বাবা নাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। এরপর রোববার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনার চারদিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই গালি এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে আটকের পর ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
 
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র এসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, শোভনের বান্ধবী তানজিলা ও রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা মূলত শোভনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কার্যকলাপের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ইতোমধ্যে পুলিশ কিছু দূর পর্যন্ত তদন্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই খুনিরা গ্রেপ্তার হবে। তদন্ত সূত্র জানায়, রাফি ময়মনসিংহ ত্রিশালের কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। ময়মনসিংহ থাকা অবস্থায় ফেসবুকে শোভনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিয়মিত ঢাকায় এসে শোভনের সঙ্গে দেখা করতেন রাফি। শোভনও ময়মনসিংহ গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতেন। অপর বান্ধবী তানজিলার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়। বাবা মারা যাওয়ার পর এইচএসসি পাস করে আর লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ৪ বছর আগে ঢাকায় এসে মিরপুর ১৩ নাম্বার এলাকার একটি রুম নিয়ে তিনি বসবাস শুরু করেন। তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডে একজন নারীর সহায়তা রয়েছে। খুনি যেই হোকে তারা তানজিলা অথবা রাফির সহায়তা নিয়ে খুন করেছে। হয় খুনিরা রাফির অভিমানকে হাতিয়ার হিসেবে শোভনের বাসার ঠিকানা ও বাসায় ফেরার সময়সূচি জেনেছে। না হয় তানজিলার অভাবটাকে হাতিয়ার হিসেবে খুনিরা ব্যবহার করেছে। তবে এই মুহূর্তে খুনিদের সম্পর্কে তথ্য বের করার জন্যই কৌশল হিসেবে তানজিলা ও রাফির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা গেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। পুলিশের এ কৌশল অনেকটা 'হোস্টেস নেগোসিয়েশনের' মতো। মূলত পুলিশ সহায়তাকারী নারীকে আগে শনাক্ত করতে চাচ্ছে। খুনিদের সঙ্গে তাদের মধ্যে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এই মামলায় যেকোনো সময় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন বিকালে তানজিলাই শোভনকে বাসা থেকে ডেকে নেন এবং নানা কৌশলে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত করে বাসায় ফিরতে বাধ্য করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের ব্যাপারে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। তার দেয়া তথ্যমতে কয়েকজনের কললিস্ট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুনিদের সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, খুনিরা অনেক ধুরন্ধর। তারা পুলিশের প্রযুক্তি কৌশল সম্পর্কে অবহিত। এই কারণে খুনিদের অবস্থান বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। খুনিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারের ঠিকানাও ভুয়া।

No comments:

Post a Comment