![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgr0ngJwCAv2y00iXBerxbMqGA3x8qmND8wHKOjvY8KMClopfs3r96eZwEoHetSKloVcZRtyKzG13mAqRDlQU4aJ4JGIalckF7HIFZMuvSUk6K-rnlx28a0RArtd4kH2S2PClfPAxRz1Hw/s400/Arif-Shathi.jpg)
হত্যার সময় ও স্থান সম্পর্কে তার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাপ্রবাহ মিলছে না। সামিউলকে রাতে তার শোবার ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয় বলে আরিফ দাবি করলেও শিশুটির বাবা কেআর আজম তা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, সামিউলের লাশ যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তার পায়ে কেডস ছিল। ঘুমানোর সময় নিশ্চয়ই কেউ জুতা পরে থাকে না। আদাবর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন মোল্লা সমকালকে বলেন, তদন্ত এখনও চলছে। এখনই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যেসব তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
গ্রিনউড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নার্সারি শাখার ছাত্র সামিউল নিখোঁজ হওয়ার দু'দিন পর গত ২৪ জুন আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ের একটি ফাঁকা প্লটে তার বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর শিশুটির বাবার দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত মা আয়শাকে ওইদিনই পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে রোববার রাতে আয়শার প্রেমিক আরিফ ও তার ভাই নুরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে র্যাব। আরিফের স্ত্রী সাথীকে শনিবার আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে চার দিনের রিমান্ডে রয়েছে আয়শা।
গ্রেফতারের পর আরিফ জানায়, ১৯ জুন রাতে সে আয়শার আদাবরের বাসায় যায়। রাতে কেআর আজম ফেরার আগেই সে ছাদে গিয়ে পালিয়ে থাকে। রাত দেড়টার দিকে আয়শা তার মোবাইল ফোনে কল দিলে সে নেমে আসে এবং আয়শার কক্ষে ঢোকে। এ সময় আয়শার সঙ্গে পরামর্শ করে সে সামিউলকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশ ফ্রিজে রাখা ও পরে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়ার কাজটি করে আয়শা। যদিও এর আগে আয়শা পুলিশকে বলেন, হত্যার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। আরিফ সব বলতে পারবে।
নিহতের বাবা কেআর আজম বলেন, আরিফের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ২২ জুন বিকেলে বাসায় ফিরে তিনি ছেলেকে দেখেছেন। পরে সে খেলতে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এ সময় সে গেঞ্জি ও কেডস পরে ছিল। ২৪ জুন সকালে এ অবস্থাতেই তার লাশ পাওয়া যায়। ঘুমের মধ্যে হত্যা করা হলে পায়ে কেডস থাকার কথা নয়। আর তার বাসার ছোট ফ্রিজে সামিউলের লাশ রাখাও সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ২২ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নবোদয় হাউজিং সোসাইটির আট নম্বর সড়কের শেষ প্রান্তে অপরিচিত তিন লোকের সঙ্গে আয়শাকে কথা বলতে দেখেন নিরাপত্তারক্ষী এরশাদ আলী বাবলু। তাকে দেখে আয়শা দ্রুত একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এর আগে ২১ জুন রাতে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় আয়শাকে দেখেন তারই এক প্রতিবেশীর গাড়িচালক।
আরিফের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ওই বাড়িতে সামিউলকে হত্যা করা হলে কীভাবে তার লাশ বের করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে আদাবর থানার ওসি বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে কোনো অসতর্ক মুহূর্তে হয়তো লাশটি বের করা হয়। অথবা রাতে ছাদ থেকে বস্তাবন্দি লাশ রশি দিয়ে নিচে নামানো এবং পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। ওসির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি আজম।
এদিকে আয়শার সহায়তায় সামিউলকে হত্যার কথা আরিফ বললেও রিমান্ডে আয়শা তা অস্বীকার করেন। তার বক্তব্য, সামিউল খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর কী ঘটেছে তার জানা নেই। তবে আরিফ এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তিনি পুলিশকে জানান। আরিফের বক্তব্য তাকে জানানো হলে তিনি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে ছিলেন বলে ওসি জানান। তার এ নীরবতাকেই হত্যায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ।
সামসুজ্জামান আরিফের স্ত্রী সাথী ও আরিফের আপন ছোট ভাই নুরুজ্জামান নুরু ১ বছর ধরে স্বামী স্ত্রীর মতো বসবাস করছিল। আয়েশার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় আরিফের। গত বছর সাথীকে তালাক দেয় সে। সাথী চলে যায় পিতৃগৃহে। সেখানে গিয়ে ওঠে নুুরুজ্জামান। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতো সাথী ও নুরুজ্জামান। আপন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সাবেক স্ত্রীর এভাবে বাস করা মেনে নিতে পারেনি আরিফ। সামিউল খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার সময় সে র্যাবকে বলে, খুন আমি করিনি। খুন করেছে আমার ছোট ভাই নুরুজ্জামান। পরে নুরুজ্জামানকে বাড্ডার নতুন বাজার থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাকে এই মামলায় আসামী করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এদিকে আরিফ গতকাল মহানগর হাকিম মোয়াজ্জেম হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি অনুযায়ী, আয়শার পরামর্শে রাত দেড়টার দিকে সামিউলকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর রাতে ছাদে পালিয়ে থেকে পরদিন সন্ধ্যার পর সে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আরিফ ও তার ভাই নুরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় গ্রেফতার আরিফের স্ত্রী সাথীকে গতকাল মহানগর হাকিম কামরুন্নাহারের আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
No comments:
Post a Comment