![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg9FiJuqSyjkJgAa1aies3XC4QVg0fI1OaxREsoFG3Ug7j02XZKlxrpZBtLNoP1fiV_iTtKYS3L9evskgKXTOkg0bG2fAyGZUJgZe5UWDNQ-qfZj4jgn5Ggos1v-tpbw11UzD3cikJDqpA/s400/Nator+Upozila+Chairman+Babu+Murder.jpg)
নাটোরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সশস্ত্র হামলায় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবু (৩৮) নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় বনপাড়ায় বিএনপি আয়োজিত এক মিছিলে এ হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম এবং যুবলীগ কর্মী রাকিব, জামিল ও বাবলুর নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা ও স্থানীয় পৌর মেয়র ইসহাক আলী এবং চার সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাবুকে হত্যার প্রতিবাদে বড়াইগ্রাম পৌর বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে তারা এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেছেন, এটি ঢাকায় লগি-বৈঠা হামলার অনুরূপ। আগামীকাল রোববার নাটোরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকাল ১১টায় বনপাড়া পৌর বিএনপির উদ্যোগে মাসব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সভা ও দুলুর আগমন উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নূর বাবুর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে বনপাড়া বাজারে পেঁৗছলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল উদ্দিন আলী, উপজেলা যুবদল সভাপতি রফিক সরদার, নাজিম উদ্দিন, আবদুল আলিম ও মোজাম্মেল হকসহ ৩০ জন আহত হন। সানাউল্লাহ নূর বাবুকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে, আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। এদিকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন দাবি করেন, তিনি এ হত্যাকাণ্ড এবং হামলার সঙ্গে জড়িত নন।
বাবু হত্যার জন্য স্থানীয় নেতা জাকিরকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সে-ই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় লগি-বৈঠা দিয়ে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, এবারও আওয়ামী লীগ নাটোরে বাবুকে সাপের মতো নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সময়ে পুলিশ নির্বিকারভাবে পাথরের মতো নিশ্চুপ ছিল। সরকার একের পর এক মামলা প্রত্যাহার করে খুনি ও হত্যাকারীদের ছেড়ে দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। এভাবে খুন করে সরকারি দল দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপি সভাপতি সানাউল্লাহ নূর বাবুর নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বনপাড়া বাজারের দিকে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা অতর্কিত তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এর আগে বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র ইসহাক আলীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বনপাড়া বাজারের দিকে যাওয়ার সময় তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে মারধর এবং গাড়ি ভাংচুর করে সরকারদলীয় কর্মীরা। এ সময় ইসহাক আলী ও তার গাড়িচালক জয়নালসহ পাঁচজন আহত হন।
এদিকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হানিফ আলী শেখ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। তিনি বলেন, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে এমনিতেই সেখানকার সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত ছিলেন। এছাড়া নিহত উপজেলা চেয়ারম্যানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে এলাকাবাসী তার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন। এ অবস্থায় বিএনপির মিছিল থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বাধা দিলে তারাও আক্রান্ত হয়। পরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সানাউল্লাহ বাবু আহত হন। তিনি আরও বলেন, আহত বাবুকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বিএনপিকর্মীরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে গড়িমসি করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্তরিক হলে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা : সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হন। হামলাকারীদের আক্রমণে চার সাংবাদিক আহত হন। তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া এবং ভাংচুর করা হয়। আহতরা হলেন ডেসটিনি ও বাংলার চোখের নাটোর জেলা প্রতিনিধি শেখ তোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নাটোর জেলা প্রতিনিধি নাসিম উদ্দিন, দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যান লিমন হোসেন ও এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান রানা আহম্মেদ। হামলায় তোফাজ্জল হোসেনের ডান পা ভেঙে যায় এবং বাঁ হাত গুরুতর জখম হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রানা আহম্মেদের মাথা ফেটে যায়। লিমন হোসেনকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।
যান চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ : সংঘর্ষের সময় ঢাকা-রাজশাহী ও নাটোর-পাবনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বনপাড়া বাজারের সব দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকে। ভয়ার্ত মানুষ দিগ্গি্বদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। হামলাকারীরা তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি প্রাইভেট কার ও সাতটি সিএনজি ট্যাক্সি ভাংচুর করে।
পুলিশের নীরব ভূমিকা : বিএনপি অভিযোগ করেছে, হামলার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তারা মারমুখী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের থামানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুর মৃত্যু সংবাদটি শুনেছি। এ ঘটনায় থানায় এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে নাটোরের পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশ বা মিছিলের খবর আগে পুলিশকে জানানো হয়নি। বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে ঘটনাস্থল প্রায় দেড় কিমি দূরে, যে কারণে পুলিশ সময়মতো সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। তিনি বলেন, সংঘর্ষে লাঠিসোটা ব্যবহৃত হয়েছে, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ : হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে দু'দফায় সমাবেশ করেছে স্থানীয় বিএনপি। দুপুর ১২টায় বড়াইগ্রাম পৌরসভা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল হক মুক্তার নেতৃত্বে পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিএনপিকর্মীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বনপাড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বাজারের পাটোয়ারী হাসপাতাল ভাংচুর করে। রাজশাহীতেও এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বাবু গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলে তাকে দেখতে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তারা বাবুর মৃত্যু সংবাদ পান। ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতারা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এদিকে আজ দুপুর দেড়টায় ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
দুলুর প্রতিক্রিয়া : হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সাবেক উপমন্ত্রী ও নাটোর জেলা বিএনপি সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি বনপাড়ায় পেঁৗছানোর আগমুহূর্তে উপজেলা চেয়ারম্যন সানাউল্লাহ নূর বাবুসহ দলের নেতাকর্মীরা বনপাড়া বাজারের দিকে এগোতে থাকলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা সানাউল্লাহ বাবুকে রাস্তার ওপর ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তারা বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র ইছহাক আলীসহ আমার দলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এই পরিকল্পিত হামলা ঢাকায় লগি-বৈঠা হামলার অনুরূপ। গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে তাদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা বলতে গেলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা গণতন্ত্রকে হত্যা করার শামিল। ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আজকের এ হামলা ও সাংবাদিকদের নির্যাতন বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সকাল ১১টায় জানাজা : নিহত সানাউল্লাহ নূর বাবুর লাশ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নাটোর বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আনা হয়। আজ সকাল ১১টায় বনপাড়া হাইস্কুল মাঠে তার জানাজা হবে।
তিন দিনের কর্মসূচি : এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ বাবুকে হত্যা এবং মিছিলে হামলার প্রতিবাদে নাটোর জেলা বিএনপি তিন দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল রোববার নাটোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে।
No comments:
Post a Comment