তোমাকে কাজের কথা বললেই ঘর থেকে চলে যেতে বলো কেন- এ কথা বলতে না বলতেই ভাবী রাবেয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তার দেবর শাহীন (২৬)। এ সময় রাবেয়ার স্বামী মোস্তাফিজ তার স্ত্রীকে বাঁচাতে গেলে তাকেও দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে সে। এ বীভৎস হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন রাবেয়া খাতুন (২৭)। মা, বাবা ও বড় ভাইয়ের সামনে ভাবীকে খুন করে পালিয়ে যায় শাহীন। পারিবারিক কলহের কারণে গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর সবুজবাগ থানার কুসুম বাগ মসজিদ গলির ১২৭৫ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাবেয়ার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান (৩৩) গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তাফিজের দোকান কর্মচারী শাহ আলম (১৫) বলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে শাহীন প্রথমে মোস্তাফিজুরের স্ত্রী রাবেয়ার ওপর দা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় রাবেয়াকে বাঁচানোর জন্য মোস্তাফিজ এগিয়ে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে সে। গতকাল দুপুরে মোস্তাফিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সারা ঘরে ছোপ ছোপ রক্ত। আর কান্নার রোল। শোকে মুহ্যমান মোস্তাফিজের পিতা আজিজুল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। দু’চোখ গড়িয়ে পড়ছে পানি। তিনি বলেন, মোস্তাফিজের গায়ে আমি কখনও হাত তুলিনি। তাকে এভাবে কোপাতে পারলো শাহীন। আমার পুতরে বাঁচাও আল্লা। এ সময় আরেক ছেলের বউ রাবেয়া খাতুন রুনা কান্না শুরু করলে আজিজুল বলেন, রুনা তুমি আর কাইন্দ না। আমার কান্দন বাড়াই দিও না মা। শাহ আলম বলে, ভাবী রান্নাঘরে দুধ গরম করছিলেন। এ সময় তার ওপর দা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহীন।। আজিজুল হক বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে গত রাত থেকে ঝগড়া শুরু হয়। শাহীন কোন কাজ করতো না। এ কারণে প্রায় সময়ে বাগবিতণ্ডা ও ঝগড়া লেগে থাকতো। একপর্যায়ে শাহীন বলে, তোর বউসহ এক্ষুণি বের হ বাসা থেকে। এ সময় রাবেয়া বলেন, তোমাকে কাজ করতে বললেই আমাদের চলে যেতে হবে কেন? এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে দা নিয়ে রাবেয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহীন। এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে দা দিয়ে। এ সময় এদেরকে বাঁচানোর জন্য বাবা আজিজুল হক ও মা হনুফা বেগম এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করে সে। আজিজুল হকের হাত কামড়ে দেয়, মাকে ঘুষি মেরে ফেলে দেয় শাহীন। ঘটনার বীভৎসতা দেখে দোকান কর্মচারী শাহ আলম ঘরের ভিতর লুকিয়ে পড়ে। কোন বাধা ছাড়াই ভাই ও ভাবীকে কুপিয়ে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায় শাহীন। এ ব্যাপারে মোস্তাফিজের ছোট ভাই শামসুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া বেগম রুনা (২৬) বলেন, আমি ৪-৫ দিন আগে আমার বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম। কিছুই জানি না। তবে শাহীন মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিল। এজন্য তাকে ডাক্তারও দেখানো হয়েছে। সে কোন কাজ করতো না বলে সবাই তাকে কাজ করার জন্য বলতো। এর আগে তাকে একবার বাহরাইন পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে মারামারি করে চলে আসে। রুনা বলেন, বাসায় কারও সঙ্গে ওর সুসম্পর্ক ছিল না। মোস্তাফিজ ও রাবেয়া দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম সিয়াম (২), মেয়ের নাম মৃদুলা (১)। ৩ বছর আগে মোস্তাফিজের সঙ্গে রাবেয়ার বিয়ে হয়েছে। রাবেয়া এ বছর তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স (বাংলা) পাস করেছে। স্বামী মোস্তাফিজ ব্যবসা করেন। দক্ষিণ গাঁয়ে হার্ডওয়ারের দোকান আছে। কুমিল্লার আজিজুল হকের চার ছেলে ও দু’মেয়ে। সবার বড় মোস্তাফিজ। এদের মধ্যে শাহীন তৃতীয়। ছোট ছেলে জুম্মন লন্ডনে। হনুফা বেগম বলেন, গত সোমবার রাতে ঝগড়া না করার জন্য তার পা ধইরা মাফ চাইছি। দেবর-ভাবী একজন আর একজনকে দেখতে পারতো না। ভাবীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে আমাকেও কোপাতে শুরু করে
No comments:
Post a Comment