নাটোরের পর এবার ফরিদপুরের মধুখালীতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দুর্বৃত্তদের শিকার হয়েছেন চাঁপারানী ভৌমিক (৫২)। তাকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে উল্লাসনৃত্যে মেতে উঠেছিল বখাটেরা। মধুখালী চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হীরা বিশ্বাসকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করেন তার মা চাঁপারানী ভৌমিক। আর এ দোষে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ওদিকে হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। গতকাল বিক্ষুব্ধ মানুষ মধুখালীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এলাকাবাসী জানান, গত ২৬শে অক্টোবর বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে মধুখালী উপজেলা সদরের ফরিদপুর চিনিকল খাদ্যগুদামের কাছে এলাকার মদ ব্যবসায়ী রতন সাহার ছেলে রনি সাহা দুই সহযোগীসহ দ্রুতগতির মোটরসাইকেলে চাঁপারানী ভৌমিককে চাপা দেয়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত চাঁপারানীকে প্রথমে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাত আটটায় তার মৃত্যু হয়। চাঁপারানী ভৌমিকের প্রতিবেশী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় চাঁপারানী এবং তার স্বামী স্বপন বিশ্বাস তাদের প্রতিবেশী হারান সরকারের বিদেশগামী মেয়েকে বিদায় জানিয়ে উপজেলা সদরের চিনিকল সড়কে তাদের বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে বখাটেরা তাদের কাছে আসে। তিনটি মোটরসাইকেলের দু’টি সাইকেল ছিল একটু পেছনে। রনি সাহার মোটরসাইকেল চাঁপারানীকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় রনি সাহার মোটরসাইকেলে ছিল রনিসহ আলমগীর ও সঞ্জয় নামের দু’যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চাঁপারানী আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর বখাটেরা হাততালি দিয়ে উল্লাস করে বলে, নালিশ করার মজা দেখিয়ে দিলাম।
চাঁপারানী ভৌমিকের ভাই অরুন ভৌমিক বলেন, এলাকার বখাটে যুবক রনি সাহা প্রায় এক বছর ধরে চাঁপারানীর মেয়ে, মধুখালী চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হীরা বিশ্বাসকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে যাওয়া-আসার সময় তাকে আজেবাজে কথা বলতো। সে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও চাঁপারানী ওই ইভটিজিংয়ের কোন প্রতিকার পাননি। এর আগে রনির পিতা রতন সাহার কাছে অভিযোগ করায় রনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চাঁপারানী এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং নারী নেত্রীদের কাছে গিয়েও কোন সুফল পাননি। রনি সাহার ইভটিজিংয়ের কবল থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে চাঁপারানী ছয় মাস আগে মধুখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কোন সুফল তিনি পাননি।
চাঁপারানী নিহত হওয়ার খবরে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীসহ মধুখালী বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং হত্যাকারী রনি সাহার ফাঁসি দাবি করে। সাধারণ মানুষের মিছিলে যোগ দেন এলাকার রাজনীতিবিদ এবং জনপ্রতিনিধিরাও। মধুখালী থানা সূত্রে জানা গেছে, নিহত চাঁপারানীর ভাই অরুন ভৌমিক বাদী হয়ে রনি সাহার বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
নিহত চাঁপারানী ফরিদপুর চিনিকলের টাইপিস্ট পদে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস মধুখালী উপজেলা বিআরডিবিতে চাকরি করেন।
No comments:
Post a Comment